
ড্রেসিনা আমাদের দেশে নতুন কোনো গাছ নয়। এ দেশের অনেক নার্সারিতে ও বাড়িতে নানা রকমের ড্রেসিনা গাছ চোখে পড়ে। বিশেষ করে অন্দরমহলের বাহারি গাছ হিসেবে আমাদের দেশে ড্রেসিনা গাছ কয়েক দশক হলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ড্রেসিনা অ্যাসপারাগাসি গোত্রের শোভা বাড়ানোর গাছ। ফুলের চেয়ে এর পাতার সৌন্দর্যই বেশি। সারা পৃথিবীতে এ গোত্রের ড্রেসিনা গোত্রের প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। বাংলাদেশের উদ্ভিদ নামের অভিধান গ্রন্থে ড্রেসিনার সাতটি প্রজাতির নাম পাওয়া যায়। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ বইয়ের একাদশ খণ্ডে ড্রেসিনার তিনটি প্রজাতির বর্ণনা রয়েছে। এসব প্রজাতির বাইরে বলধা গার্ডেনে গিয়ে সূর্যঘড়ির পাশে দেখা পেলাম আরও এক প্রজাতির ড্রেসিনা গাছের। পাতা সবুজ হলেও তার ওপর সোনার গুঁড়োর মতো ছিটছিট অসংখ্য দাগ রয়েছে। এ জন্য এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে গোল্ড ডাস্ট ড্রেসিনা বা স্পটেড ড্রেসিনা। কোনো বাংলা নাম নেই। ইংরেজি নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এর বাংলা নাম দেওয়া যেতে পারে সোনা ধুলো ড্রেসিনা। এ দেশের উদ্ভিদ তালিকায় একে গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভারত থেকে ২০০১ সালে পুনঃমুদ্রিত ট্রপিক্যাল গার্ডেন প্লান্টস বইয়ে ড্রেসিনার তিনটি ছবি দেখেছিলাম। তিনটি ছবির গাছের পাতাই হলদে ফুটি দাগযুক্ত, একটিতে কম, আরেকটিতে বেশি ও অন্যটিতে পাতার মধ্য শিরা বরাবর ছিল টানা একটা চওড়া হলদে রেখা। বইটিতে লেখক সে প্রজাতির গাছের ইংরেজি নাম লিখেছেন গোল্ড ডাস্ট ড্রেসিনা, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ছিল ড্রেসিনা গোডসেফিনা (Dracaena godseffiana), বর্তমানে উদ্ভিদবিদরা এর প্রজাতিগত নাম পরিবর্তন করে নাম দিয়েছেন ড্রেসিনা সারকুলোসা (Dracaena surculosa)। বইটিতে তিনটি ছবি ছিল গোল্ড ডাস্ট ড্রেসিনার তিনটি জাতের। দুটি জাত ছিল ফ্লোরিডা বিউটি ও ফ্রাইডম্যান, অন্যটির কোনো জাতের নাম ছিল না। ফ্লোরিডা বিউটি জাতটি তার ব্যতিক্রমী শোভার কারণে লন্ডনের রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির গোল্ডেন মেরিট পুরস্কার লাভ করেছিল। বর্তমানে গোল্ড ডাস্ট ড্রেসিনার দুটি গ্রহণযোগ্য প্রকরণ হলো Dracaena surculosa var. maculata ও Dracaena surculosa var. Surculose। প্রকরণ অনুসারে এর পাতার চেহারাও ভিন্ন হয়।
একহারা সবুজ রঙের পাতার ড্রেসিনা গাছ অনেক দিন ধরে দেখে আসছি এ দেশে। ছবিতে দেখার পর বৈচিত্র্যময় বাহারি পাতার এ ড্রেসিনাকে খুঁজতে লেগে পড়ি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন নার্সারিতে হানা দিই। ফার্মগেটে খামারবাড়ির পাশে এখন যেখানে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, সেখানে একসময় অনেক নার্সারি ছিল। ২০০৬ সালের দিকে সেখানে কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারিতে প্রথম সেই গোল্ড ডাস্ট ড্রেসিনা গাছের দেখা পাই। এর পর আরও কয়েকটি নার্সারিতে গাছটির দেখা মেলে। তবে অন্য ড্রেসিনা গাছগুলোর মতো গোল্ড ডাস্ট ড্রেসিনা গাছ ততটা চোখে পড়ে না। অবশ্য গাছটি এ দেশের নয়। এর জন্মভূমি পশ্চিম-মধ্য আফ্রিকা। গায়ানা থেকে কঙ্গো পর্যন্ত এর আদি নিবাস বিস্তৃত। সেখান থেকে নানা দেশ ঘুরে এ দেশে এসেছে।
গোল্ড ডাস্ট ড্রেসিনা একটি শাখায়িত বহুবর্ষজীবী চিরসবুজ গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ প্রকৃতির গাছ। মাটিতে বা বাগানে লাগালে গাছ বড় হয়, টবে রাখলে খাটো থাকে। এর কাণ্ড দেখতে অনেকটা নলখাগড়ার কাণ্ড বা সরু কঞ্চির মতো। কাণ্ডের রং সবুজ। পাতা চকচকে সবুজ, সোনালি-হলুদ বিন্দু বিন্দু ফোঁটাযুক্ত, অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ, কিনারা মসৃণ, ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার। গাছে রজনীগন্ধার মতো ডাঁটিতে কয়েকটা সাদা রঙের ফুল ফোটে বসন্তে। বৃতির রং সবুজাভ সাদা। ফল গোলাকার, খোসা মসৃণ, কাঁচা ফলের রং সবুজ, পাকলে হয় টকটকে লাল, ফল পাকে গ্রীষ্মকালে। ফলের ব্যাস প্রায় দুই সেন্টিমিটার। কাণ্ড কেটে মাটিতে পুঁতে কলম করে এর চারা তৈরি করা যায়। বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল চারা তৈরির ভালো সময়। কাঁটা কাণ্ডের মাটির নিচের গিঁট থেকে শিকড় জন্মে ও ওপরের গিঁট থেকে জন্মে পাতা। আধোছায়া জায়গায় গাছ ভালো হয়। এ গাছের জন্য মাটি সব সময় ভেজা থাকা ভালো, তবে জলাবদ্ধতা ভালো না।
এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে