ঢাকা   রোববার
২০ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মুহররম ১৪৪৭

উচ্চ লবণসহিষ্ণু ‘জিএইউ গম-১’ নামে নতুন গমের জাত উদ্ভাবন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৩ জুলাই ২০২৫

উচ্চ লবণসহিষ্ণু ‘জিএইউ গম-১’ নামে নতুন গমের জাত উদ্ভাবন

‘জিএইউ গম-১’ নামে নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। দুই বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম ময়নুল হক ও ড. মো. মসিউল ইসলাম এটি উদ্ভাবন করেছেন। নতুন এ জাতের গম উচ্চ লবণ সহনশীলতার দিক থেকে দেশের প্রথম উদ্ভাবন বলে গবেষকদ্বয় দাবি করেছেন। এ নিয়ে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত গমের জাতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯১-এ। গত ১৭ জুন উদ্ভাবিত নতুন গমের ছাড়পত্র দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লবণসহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেশের ৬টি স্থানে মাঠ মূল্যায়নে প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড ছাড়পত্র দেয়। এ গমে বিদ্যমান অধিক প্রোটিন শরীর গঠন ও মেরামত, শক্তি সরবরাহ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত  গ্লুটেনিন থাকায় এতে উচ্চ প্রোটিন ও কম ফ্যাট। এতে সহজে শরীরে শোষিত হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, জিএইউ গম-১-এর দানা তামাটে, চকচকে এবং তুলনামূলক কম সময়ে পুষ্ট হয়। আমন মৌসুমে ধান কাটার পর বীজ বপন করলে ৯৫ থেকে ১০০ দিনে উৎপাদন পাওয়া যায়। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। এ গমের গাছ বড়, কাণ্ড মোটা ও গুটির সংখ্যা বেশি। অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়। গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উৎকৃষ্টমানের এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি স্বাভাবিক মাটিতে সাড়ে ৪ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩.৭৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। এই গুণ অন্যান্য জাতের গম থেকে একে বিশেষ স্থানে নিয়ে গিয়েছে।

উদ্ভাবক মো. মসিউল ইসলাম বলেন, জিএইউ গম ১ উদ্ভাবন আমাদের দীর্ঘদিনের গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার ফল। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও লবণাক্ত এলাকায় ফসল উৎপাদনের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমরা এ জাত উদ্ভাবন করি। এই জাতটি লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। তুলনামূলকভাবে অধিক ফলন দেয়। এটা কৃষকের জন্য যেমন লাভজনক, তেমনি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও লবণাক্ত এলাকায় কৃষি উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষকদ্বয় নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ উদ্ভাবন শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের কৃষি খাতের জন্য বড় অর্জন।’