ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৪ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ সফর ১৪৪৭

নতুন পানির অভাবে বিঘ্নিত প্রজনন: হাওরে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা

agri24.tv

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ৬ জুন ২০২৪

আপডেট: ০৯:৫১, ৬ জুন ২০২৪

নতুন পানির অভাবে বিঘ্নিত প্রজনন: হাওরে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা

সাধারণত বৈশাখে হাওরে নতুন পানি আসে। এ সময়ে প্রজনন হয় দেশী মাছের। তবে এবারের চিত্র ছিল ব্যতিক্রম। বৈশাখে তেমন বৃষ্টি হয়নি। জ্যৈষ্ঠে কিছুটা বৃষ্টিপাত দেখা গেলেও হাওরে নতুন পানি আসেনি। যেটা এসেছে, সেটা পাহাড়ি ঢলের পানি। তাও যৎসামান্য। সময়মতো নতুন পানি না পেয়ে প্রজনন করতে পারেনি দেশীয় প্রজাতির মাছ। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।

কারণ হিসেবে মৎস্য বিভাগ বলছে, হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধ দেয়ায় পানি প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে দেশী মাছের প্রজনন হচ্ছে না। এবার মাছের প্রজনন পিছিয়ে যাবে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মৎস্যজীবীরা জানান, জেলায় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হাওরে পানি নেই বললেই চলে। নতুন পানি না আসায় মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হচ্ছে। এজন্য দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এ বছর মাছের প্রজনন পিছিয়ে গেছে। এটি অশনিসংকেত।

দেকার হাওরপাড়ের বাসিনা অলিউর রহমান বলেন, ‘সবসময় বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে বৃষ্টিপাত হয়। নতুন পানিতে আমরা অনেক মাছও ধরেছি। কিন্তু এখন হাওরে মাছ নেই। হাওরে যদি পানি থাকত তাহলে মাছও পাওয়া যেত। চলতি সপ্তাহে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু মাছের দেখা মেলেনি।  বাজারে প্রত্যাশিত পরিমাণে দেশী মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।’

মৎস্যজীবী খোকন মিয়া বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে ঢলের পানি প্রবেশ করলেও সুনামগঞ্জে এখনো বন্যা হয়নি। এবার পানি না আসায় হাওরে মাছও কম। মাছ না থাকায় আয়-রোজগারও কম। দেশী মাছ এখন গ্রামগঞ্জের বাজারে নেই বললেই চলে।’

জানা গেছে, ২০২২ সালে দফায় দফায় বন্যায় প্লাবিত হয় সুনামগঞ্জ জেলা। পানিতে ভরা ছিল নদ-নদীসহ হাওরগুলো। ২০২২ সালের আগে বেশির ভাগ সময় সুরমা-কুশিয়ারাসহ জেলার প্রায় সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল। এমনকি মরা নদীগুলোর পানিও সমতল ছিল। বর্তমান সময়ের চেয়ে দেড়-দুই মিটার পানি বেশি ছিল নদ-নদীতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সময়মতো পানির দেখা মিলছে না হাওরে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও হাওর বিশ্লেষকরা কারণ চিহ্নিত করেছেন সীমান্তঘেঁষা ভারতের মেঘালয় ও বারাক অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি না হওয়া। সেখানে ভারি বৃষ্টি হলেই সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চলতি বছর মেঘালয় ও বারাক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদ-নদীতে পানি বাড়েনি। ফলে এর প্রভাব পড়ছে হাওরে মাছ উৎপাদনে। বন্যায় হাওরাঞ্চলে দৃশ্যমান কিছু ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে উপকার পান জেলে ও কৃষকরা, যা হয়নি এবার।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাওরাঞ্চলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার টন। চলতি বছর ১ লাখ ১৫ হাজার টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হাওরগুলোয় ১ হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা। তবে সময়মতো বৃষ্টিপাত ও পানি না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠন হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘এ বছর বন্যা তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত ভালো করে বৃষ্টিও হয়নি। হাওরে নতুন পানি না আসায় মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোয় ফিশ প্লাসের ব্যবস্থা না থাকায় মাছের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগামী কয়েক বছর অভিন্ন থাকতে পারে। এরপর হয়তো স্থায়ী রূপ পাবে এবং ঋতুচক্র পুরো পাল্টে যেতে পারে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামছুল করিম বলেন, ‘হাওরাঞ্চলে সময়মতো নতুন পানি না আসায় মাছ প্রজনন করতে পারছে না। এটি অশনিসংকেত। এসবের মূল কারণ হাওরে অপ্রয়োজনীয় ফসল রক্ষা বাঁধ। এজন্য আমাদের দেশী জাতের মাছগুলো ডিম ছাড়ার জন্য কাঙ্ক্ষিত স্থানে পরিভ্রমণ করতে পারছে না। এ বছর মাছের প্রজনন পিছিয়ে যাবে হয়তো। চলতি বছর ১ লাখ ১৫ হাজার টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার হাওরগুলোয় ১ হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা।’ বণিক বার্তা

সর্বশেষ