ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৪ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ সফর ১৪৪৭

কাজে আসছে না ২১ কোটি টাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩:২০, ১১ আগস্ট ২০২৫

কাজে আসছে না ২১ কোটি টাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

কাজে আসছে না ২১ কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। অরক্ষিত এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এখন চোর, জুয়ারি এবং নেশাখোরদের আড্ডাখানা। কাগজে-কলমে জনবল থাকলেও দেখা মেলে না কারো। 

২১ কোটি টাকা ব্যয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করার ৩ বছর পরেও চালু না হওয়ায় কোনো কাজেই আসছে না ভবনটি।

নির্মাণের ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো মৎস্য ব্যবসায়ীরা না আসায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যে শর্ত দিয়েছে তা মেনে ব্যবসা করা সম্ভব না। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পুরাতন মেঘনা ফেরিঘাটে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তর ২০ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ৪ তলা বিশিষ্ট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করে। ২০১৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনের উদ্বোধন করা হয়।

অবতরণ কেন্দ্রটি ২৭ শতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত হয়েছে। ভবনের চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর, অকশন শেড, প্যাকিং শেড, ৩৫টি আড়ত ঘর, ১টি আইসপ্লান্ট, সোলার প্যানেল, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, গভীর নলকূপ, আইস ক্রাসার ও জেনারেটর ব্যবস্থাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রায় ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও কোনো ব্যবসায়ী অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে আসছেন না। 

অন্যদিকে পুরাতন নৈশ মৎস্য আড়তদার রয়েছে ১৫০ জন। প্রতিটি আড়তের সঙ্গে রয়েছে মাছ রাখার পর্যাপ্ত জায়গা ও প্রসেসিং করার মতো বরফ কলসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা।

কাগজে কলমে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১ জন ব্যবস্থাপকের নাম থাকলেও সরেজমিনে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে ১ জন ল্যাব কন্ট্রোলার ও ১ জন নাইট গার্ড দায়িত্ব পালন করছেন। 

ভৈরব নৈশ মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী আবু হানিফ  জানান, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে হলে ২ লাখ টাকা অগ্রিম, মাসে ২ হাজার টাকা করে ভাড়া, বিক্রিত মাছের শতকরা দেড় টাকা কমিশন দিতে হবে সরকারকে। এসব শর্তে ব্যবসা করলে তাদের আর্থিকভাবে ক্ষতি হবে। ব্যবসা টিকানো যাবে না।

তাছাড়া অবতরণ কেন্দ্রে মাছ রাখা বা প্রসেসিং করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা (মাঠ) নেই। শুধু তাই নয়, আগের মতো মিঠা পানির মাছ এখন আড়তে আসে না।

আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী বাবু মানিক বলেন, বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সরাসরি হাওর-বাওর বা নদীর মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। তাই ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। পুরাতন নৈশ মৎস্য আড়তে নিজেদের ভিটায় ৩০-৩৫ বছর যাবত ব্যবসা করায় কোনো ভাড়া লাগে না এবং এখানকার সরবরাহকৃত মাছ বিদেশে কিছুটা রপ্তানি করায় কোনো রকমে আড়তদাররা টিকে আছে।

ভৈরব মৎস্য আড়তদার মালিক সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, সরকার যে শর্ত দিয়েছে এসব শর্ত দিয়ে অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব না। তাছাড়া এখন আগের মতো আড়তে মাছ আমদানি না হওয়ায় নিজস্ব জায়গায় কোনো রকমে ব্যবসা করে আমরা টিকে আছি। তাই কোনো আড়ৎদার সেখানে গিয়ে ব্যবসা করতে আগ্রহী নয়। 

এ বিষয়ে কথা বলতে ভৈরব মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপকের ফোনে কল দিলে তিনি জানান, পূর্বে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। এখন তিনি অন্যত্র বদলি হয়েছেন। তবে সেখানে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয় বনিক জানান, ভৈরব উপজেলায় একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রয়েছে। এটি ৩-৪ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় পুলতাকান্দা মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ীদের এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা। যাতে ব্যবসায়ীরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে ভোক্তাদের কাছে মিঠাপানির মাছ পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা স্থানান্তর হয়নি। তারা বলছে সেখানে স্থান সংকুলান হবে না। কারণ, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ৩৫টির মতো আড়ত বসার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ভৈরবে ১৫০টি মৎস্য আড়ত রয়েছে। এসব কারণেই তারা স্থানান্তর হয়নি। পরবর্তীতে এক বছর আগে স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্য একাধিক মিটিং হয়েছে তবুও এর কোনো সমাধান হয়নি। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি বিএফডিসি থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। তারা যদি ভবিষ্যতে কোনো নির্দেশনা দেয়, তাহলে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব। 

সর্বশেষ