
সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বড় ধরনের অবদান রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, ‘দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমুদ্রসম্পদ একটি বড় অবদান রাখতে পারে। হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল ও নদী থেকে প্রয়োজনীয় মাছের প্রায় ৫০ শতাংশ আহরণ করা হলেও সমুদ্র থেকে আহরণ হয় মাত্র ৩০ শতাংশ, যা সমুদ্রে বিপুল সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। সমুদ্রের বিপুল সম্পদ কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বড় ধরনের অবদান রাখা সম্ভব।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে জাতিসংঘ গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘ওশান সেন্টারস, বাংলাদেশ’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অগ্রগতি এবং রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের বিশাল সমুদ্রাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অনাবিষ্কৃত সম্পদ রয়েছে, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘পুষ্টি পূরণে সামুদ্রিক মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে প্রচার-প্রচারণার অভাব, সহজলভ্যতার সীমাবদ্ধতা এবং অভ্যাসগত কারণে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। সামুদ্রিক শুঁটকির প্রতি যেমন আগ্রহ দেখা যায়, তাজা সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে তা ততটা নয়। ইলিশ মাছের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের ব্যবহার এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়নি।’
গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহামিন এস. জামানের সভাপতিত্বে আরো বক্তৃতা করেন লয়েডস রেজিস্টার ফাউন্ডেশনের হেরিটেজ ও এডুকেশন সেন্টারের পরিচালক অ্যালেক্স স্টিট, ওশান সেন্টারস বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড কমোডর (অব.) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এবং জাতিসংঘ গ্লোবাল কমপ্যাক্টের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির প্রবৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ খুরশেদ আলম। প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ মৎস্যশিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. খন্দকার আখতার হোসেন এবং বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনাম চৌধুরী।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণ, ব্লু ইকোনমি উন্নয়ন, টেকসই মৎস্যশিল্প এবং সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের নতুন দিগন্ত নিয়ে মতবিনিময় করেন। তাদের মতে, সমুদ্রসম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, বরং পরিবেশ সুরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।