
কয়েক দিন ধরে বকশীগঞ্জের টিলা এলাকায় অবস্থান করছে বন্যহাতির পাল। সুযোগ পেলেই দলবেঁধে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে সীমান্তবর্তী ১০ গ্রামের মানুষের। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে রাত জেগে পাহারা দিয়েও হাতির কবল থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না মাঠের ফসল।
গতকাল বুধবার বিকেলেও লোকালয়ে নেমে আসে হাতির পাল। সাতানীপাড়া এলাকার ধান, বেগুন, মাল্টা ও লেবুর বাগান বিনষ্ট করে। আগুন জ্বালিয়ে ও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। কিন্তু কোনো বাধাই মানছে না হাতির পাল। সারারাত লোকালয়েই অবস্থান করে হাতির পালটি।
জানা গেছে, কয়েক দিন আগে ভারত থেকে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ৩০-৪০টি হাতি ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের গারো পাহাড়ে আসে। রাতে লোকালয়ে এসে গাছপালা, ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলে। তাড়াতে গেলেই বাড়িঘরে হামলা চালায়। গত কয়েক দিনে আমিনুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, আল-মামুন, মাসুদ মিয়া, ইয়াকুব আলী, মুসা মিয়াসহ অন্তত ৩০ কৃষকের ফসল ও গাছপালা বিনষ্ট করেছে হাতির পাল। রাতে ক্ষয়ক্ষতি করে সকালে টিলা এলাকায় অবস্থান নেয়। হাতির ভয়ে রয়েছেন কামালপুর ইউনিয়নের শোমনাথপাড়া, বালুরচর, অশেনা কোনা, সাতানীপাড়া, টিলাপাড়া, পাগল গোছা, দিঘলা কোনা, সোমনাথপাড়া ও হাতিবারকোনাসহ সীমান্তবর্তী ১০ গ্রামের মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, বালুরচর সাতানীপাড়া এলাকায় তাঁর প্রায় ২০ একর জমিতে কৃষি খামার রয়েছে। আমন ধান, লেবু, মাল্টাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ রয়েছে। দিনে টিলায় অবস্থান করলেও সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাতির পাল নেমে আসে লোকালয়ে। রাতভর তাণ্ডব চালিয়ে ভোরবেলা আবার টিলায় চলে যায়। গত কয়েক দিনে তাঁর কৃষি খামারের প্রায় তিন একর জমির ফসল বিনষ্ট করেছে হাতি।
কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ১০-১১ দিন ধরে হাতির পাল টিলায় অবস্থান করছে। রাতে নেমে আসছে লোকালয়ে। ফসল বাঁচাতে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। আগুন জ্বালিয়ে ও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা, কিন্তু থামানো যাচ্ছে না।
কৃষক আল মামুন ও ইয়াকুব আলী বলেন, ‘প্রতিবছরই আমাদের ফসল বিনষ্ট করে। ধান পাকা শুরু হলে হাতি আসে। এবার আগেই চলে এসেছে। ফসলের ক্ষতির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে এই এলাকার মানুষের।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাপ জামালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, সীমান্তে হাতিই এখন বড় সমস্যা। সময়ে-অসময়ে হাতির পাল লোকালয়ে নেমে গাছপালা, ফসল এমনকি বাড়িঘরেও হামলা চালাচ্ছে। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। হাতি সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের নেতা রাহুল রাকসাম বলেন, ‘হাতির ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারে না এলাকার মানুষ। সারাক্ষণ আমরা শঙ্কিত থাকি, কখন যেন হাতি লোকালয়ে এসে পড়ে। হাতি সমস্যা স্থায়ী সমাধানের জন্য মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই আমরা।’
ডুমুরতলা বিট কর্মকর্তা রকিবুল হাসান রকি জানান, হাতি মূলত খাবারের জন্য লোকালয়ে আসে। বন্যপ্রাণী ঠেকানো কঠিন। এরপরেও হাতি যাতে বাড়িঘর এবং ফসলি জমির ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য কৃষকের মাঝে টর্চলাইট, বাঁশি, লাঠি, বাদ্যযন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বন বিভাগ সব সময় সজাগ রয়েছে।