ঢাকা   মঙ্গলবার
১৪ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭

শেরপুরে গারো পাহাড়ে বেড়েছে হাতির সংখ্যা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১২ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ১২:০৯, ১২ আগস্ট ২০২৫

শেরপুরে গারো পাহাড়ে বেড়েছে হাতির সংখ্যা

শেরপুরের সীমান্ত জনপদে বন্যহাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব কমছেই না। সাম্প্রতিককালে এ দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে আসা বন্যহাতির দল মানুষের বাধা পেয়ে ফসলের মাঠ ও বাড়িঘরে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এমনকি পায়ে পিষ্ট করে, শুঁড় পেঁচিয়ে তুলে আছাড় দিয়ে মানুষের জীবনহানি ঘটাচ্ছে।

তেমনি সীমান্তের অধিবাসীরাও নিজেদের টিকে থাকার লড়াইয়ে জানমাল রক্ষায় বন্যহাতির ওপর হিংস্র আচরণ করছে।

সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী-শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় পাহাড়ি জনপদে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন ও সহাবস্থান নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবুও হাতি-মানুষে যুদ্ধ থামছেই না।

শেরপুরের বনাঞ্চলে বিচরণকারী হাতির দল এখন আর ভারতের জঙ্গল থেকে আসা ‘পরিযায়ী’ নয়।

অনেক হাতি স্থায়ীভাবেই এখানে বসবাস ও বিচরণ করছে। এ জন্য বন্যহাতি সুরক্ষায় শেরপুরের পাহাড়ি জনপদে হাতির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে দাবি করছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।

ময়মনসিংহ বন বিভাগ এবং শেরপুর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হিসাব মতে, ১৯৯৫ থেকে ২০২৫ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত ঝিনাইগাতী-শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৭০ জনের। আহত হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক লোক।

অন্যদিকে মানুষের হাতে মারা পড়েছে ৩৯টি বন্যহাতি।

প্রায় এক দশক আগে আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী, শেরপুরের বনাঞ্চলে বিচরণকারী ১২০ থেকে ১২৫টি হাতি ছিল। যার সবই পরিযায়ী হাতি বলা হয়। অর্থাৎ হাতিগুলো ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের বনে ঢুকে থাকে। এসব হাতিকে এশিয়ান হাতি বলা হয়।

বর্তমানে এশিয়ান হাতি খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বন বিভাগের একটি সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরে কমপক্ষে অর্ধশত হাতি শাবকের জন্ম হয়েছে। এর আগে গারো পাহাড়ে ১০০ থেকে ১২০টি বন্যহাতির বিচরণ লক্ষ করা গেলেও বর্তমানে বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০টিতে দাঁড়িয়েছে। বন কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী, গারো পাহাড়ে ক্রমাগত প্রজননে বন্যহাতির বংশ বিস্তার ঘটছে। চলতি বছরই প্রায় ৫০টি হাতি শাবকের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এশিয়ান প্রজাতির বন্যহাতির সংখ্যা দিন দিন বিলুপ্তির পথে বলে হাতি গবেষকরা উদ্বেগ জানালেও গারো পাহাড়ে আশার আলো দেখছেন বন কর্মকর্তারা।

শেরপুর জেলা প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের উপদেষ্টা সুজয় মালাকার বলেন, ‘যদি পাহাড়ে হাতির জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে হাতি পাহাড়েই থাকবে। সুন্দরবন যেমন বাঘ রক্ষা করছে।’

তিনি বলেন, ‘বন্যহাতি সুরক্ষায় গারো পাহাড়ে হাতির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।’

শেরপুর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারিভাবে বন্যহাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে জেলায় ৫৩টি ইআরটি (এলিফেন্ট রেসপন্স টিম) গঠন করা হয়েছে। হাতি যেন লোকালয়ে না আসে সে জন্য ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি জনপদে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সোলার ফেন্সিং ও বায়োফেন্সিং করা হয়েছে। হাতির আক্রমণে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করছে সরকার।

শেরপুরে একটি হাতির অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য ২০১৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠালেও সেটি আর গতি পায়নি।

বন্যপ্রাণী গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘হাতি-মানুষে দ্বন্দ্ব নিরসন ও বন্যহাতি সুরক্ষায় শেরপুরের পাহাড়ি জনপদকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে হবে।’

শেরপুর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, ‘আসলে মানুষ তো হাতির এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এ জন্য বনাঞ্চল থেকে অবৈধ বসতি ও ফসল আবাদকারীদের উচ্ছেদ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বন্যহাতি রক্ষায় আমাদের অবশ্যই হাতির আবাস ও বিচরণস্থল নিশ্চিত করতে হবে।