ঢাকা   বুধবার
১৩ আগস্ট ২০২৫
২৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ সফর ১৪৪৭

৪২ দলের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ১৩ আগস্ট ২০২৫

৪২ দলের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে বইছে নির্বাচনী আমেজ। প্রস্তুতি নিচ্ছে ছোট কিংবা বড় সব রাজনৈতিক দলগুলো। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোডম্যাপ ঘোষণার পর আসন ও সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। এমন অবস্থায় যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনেও মিত্রদের পাশে চান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

এদিকে আগামী রমজানের আগে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণার পর মিত্র ৪২টি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন বর্জন করা আরও ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শিগগিরই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করার কথা রয়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রোববার সমকালকে বলেন, আগামী নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তাদের কথা শুনছেন। বিগত সময়ের আন্দোলনে মিত্র দলগুলোর ভূমিকা ছিল। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ধারায় কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী দিনে তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সমমনা, মিত্রদল ও জোটগুলোর শীর্ষ নেতারাও বিএনপির সঙ্গে থেকে রাজনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদেরকে নিয়ে আরও কীভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা যায়-এটা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেবেন। 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্র ও শনিবার রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৪২ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। বিএনপি মহাসচিবসহ দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাও এতে অংশ নেন। তখন নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আসছে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায়ে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে।
  
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রক্রিয়া এক ধাপ এগিয়েছে। এজন্য বিগত সময়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন তিনি। ৩১ দফার নিয়ে সবাইকে জনগণের কাছে যাওয়ার কথা বলেছেন। বৈঠকে মিত্রদলগুলোর নেতারাও যুগপৎ আন্দোনের মতো আগামী নির্বাচনে বিএনপির পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা যোগ্য নেতাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার কথাও বলেন কয়েকজন মিত্রনেতা।
 
সূত্র জানায়, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ধারায় ৬৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরমধ্যে ৬৪টি দল রয়েছে, যারা বিগত সরকারের আমলে নির্বাচন বর্জন করেছেন। এছাড়া ২৪'র গণঅভ্যুত্থানের পর গঠন হওয়া এনসিপিসহ আরো ৪ টি দলের সঙ্গে এই বৈঠক অনানুষ্ঠানিকভাবে হতে পারে। 

১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, দীর্ঘদিন আমরা একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনে লড়াই করেছি। সেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সবাই একসঙ্গে লড়াই করেছি। আমাদের এই ঐক্য অটুট রাখতে হবে। আগামী দিনেও আমরা যে কোনোভাবে ঐক্য ধরে রাখবো।
 
শনিবার বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছি, আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এখন বহুমাত্রিক নিরাপত্তার ঝুকির মধ্যে রয়েছে। আমরা দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এখন থেকে নিয়মিত আমরা বসবো। আলোচনা হবে। আন্দোলনের সময় যে বোঝাপড়াটা, এখনকার পরিস্থিতি ও আগামীতেও যেন বোঝাপড়াটা অব্যাহত থাকে। 

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বিএনপির সঙ্গে ২০১২ সাল থেকে জোটে আছি। ২০২২ সালে জোট ভেঙ্গে গেলে তখন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যারা বিএনপির সঙ্গে মিলে কর্মসূচি পালন করছে, তাদের নিয়ে আগামীতে পথ চলবেন। আগামীতে জোট হোক বা না হোক, আমরা যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম সেই তালিকা তাদের (বিএনপি) কাছে আছে। বড় দল হিসেবে বিএনপি যোগ্য প্রার্থীর মূল্যায়ন করবে বলেই তার প্রত্যাশা।
     
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নতুন প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়বো। বিএনপিও এটাই চায়। বিগত সময়ে আমরা বিএনপির সঙ্গে মিলে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম, এখনো আছি। আগামী দিনেও থাকবো।
 
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নানা নির্যাতন সহ্য করেছি। লোভ-লালসা ত্যাগ করে বিএনপির সঙ্গে ছিলাম। আমরা জয় পেয়েছি। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে সরকার। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অতীতের মতোই আগামী দিনেও আমাদেরকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে চান। কাজ করতে চান। আমরাও নির্বাচনী মাঠে বিএনপির পাশে থাকবো।
  
এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা কি করতে পারি, আমাদের কি কি দ্বায়িত্ব আছে এগুলো নিয়ে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে এটা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে বেশ কিছু দ্বায়িত্ব আছে আমাদের, সেগুলো নিয়ে আমার দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়েছি।
 
বিএনপি সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া ৪২টি দলের মধ্যে রয়েছে- ১২ দলের সমন্বয়ে ১২ দলীয় জোট, ১১ দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লেবার পার্টি, চার দলীয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, এনডিএম,  জন অধিকার, পিপলস পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, আমজনতা দল।

সর্বশেষ