ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৪ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ সফর ১৪৪৭

গরুর খামার গড়ে ভাগ্য বদলেছেন ঝিনাইদহের আম্বিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১৩ আগস্ট ২০২৫

গরুর খামার গড়ে ভাগ্য বদলেছেন ঝিনাইদহের আম্বিয়া

২০১৫ সালে স্বামী অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। সেই থেকে বাবার বাড়িতে থাকছেন তিনি। বাবা তাঁকে এক বিঘা জমি দেন। ওই জমিতে ২০১৭ সালে মাত্র চারটি গরু নিয়ে গড়ে তোলেন খামার।

এর পর থেকে তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। হয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কারসহ আরো স্বীকৃতি।
এই অদম্য নারী উদ্যোক্তা আম্বিয়া খাতুন।

তিনি ঝিনাইদহ সদরের বাদপুকুরিয়া গ্রামের গোলাম রসুলের মেয়ে। বাবা অবশ্য বেঁচে নেই।

গরুর খামার গড়ে নিজের ভাগ্য বদলেছেন আম্বিয়া। তাঁর সাফল্যে ওই গ্রামের অসচ্ছল নারীরা গরুর খামার গড়ে তুলেছেন।

তাঁরাও আজ সফল। বদলে গেছে বাদপুকুরিয়া গ্রামের চিত্র। আম্বিয়ার এমন উদ্যোগ আলোচিত হয়েছে দেশজুড়ে।

আম্বিয়ার খামারে এখন মোট ৫৮টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে উন্নত জাতের ১৭টি ফ্রিজিয়ান গাভি, ১১টি বাছুর আছে।

প্রাকৃতিক উপায়ে খাদ্য তৈরি করে এসব গরুকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেন তিনি। গরুর পরিচর্যা ও খামার পরিষ্কার রাখতে পাঁচজন কর্মচারী রেখেছেন আম্বিয়া। মাঠ থেকে ঘাস কাটা, ঘাস লাগানো, ঘাসের জমির পরিচর্যার জন্যও রয়েছে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক শ্রমিক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাদপুকুরিয়া গ্রামের বাড়ির পাশেই বিশাল জায়গাজুড়ে গরুর খামার। খামারের কাজে ব্যস্ত কর্মচারীরা। খামার ঘুরে ঘুরে দেখছেন আম্বিয়া খাতুন। বিভিন্ন বিষয়ে কর্মচারীদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

জানা যায়, অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতে আম্বিয়া খাতুন বাদপুকুরিয়া গ্রামে গরু প্রতিপালন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওই সমিতির সদস্যরা  প্রতি মাসে এক হাজার টাকা জমা দেন। সমিতির মূলধন এরই মধ্যে ১০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগে বাদপুকুরিয়া গ্রামের চিত্র বদলে গেছে। এসব কারণে এলাকার মানুষের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয় আম্বিয়া।

২০২২ সালে আম্বিয়া দেশের উদীয়মান উদ্যোক্তা নির্বাচিত হন। একাধিকবার পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কার। বিশ্বব্যাংক থেকে পেয়েছেন আর্থিক অনুদান।

খামারের কর্মচারী আব্দুল আলিম বলেন, ‘আম্বিয়া আপার খামারে আমি ছাড়াও আরো কয়েকজন কাজ করেন। মাস শেষে আমরা নিয়মিত বেতন পাই। বেতনের টাকায় আমাদের সংসার খুব ভালোভাবে চলছে।’

উদ্যোক্তা আম্বিয়া খাতুন বলেন, ‘একসময় ইউটিউবের ভিডিওতে গরুর খামার করে অনেক মানুষের সফল হয়ে ওঠার চিত্র দেখতাম। আমি তখন খামার করার পরিকল্পনা করি। পরে ২০১৭ সালে আমি চারটি ফ্রিজিয়ান গাভি দিয়ে খামার শুরু করি। বছর দেড়েক পর গাভি থেকে কয়েকটা বাছুর হয়। এরপর খামার নিয়ে আমাকে আর ভাবতে হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভালো জাতের গরু কিনে আনি। এক থেকে দেড় বছর লালন-পালনের পর সেগুলো বিক্রি করে দিই। এতে খামারের খরচ জোগানো আমার জন্য সহজ হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া—দেশের সব অসহায় নারী স্বাবলম্বী হোক। তাঁদের পরিবারে সচ্ছলতা আসুক। আমার খামার দেখে আমাদের গ্রামে অনেকে এখন খামার গড়ে তুলছেন। আমার বিশ্বাস, সততা ও ধৈর্য থাকলে সফলতা একদিন আসবেই।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘আম্বিয়া একজন সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ। এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নিজের উপার্জিত অর্থ ব্যয় করছেন। তাঁকে অনুসরণ করে আমাদের এলাকার অনেকেই আজ গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছে।’

আম্বিয়ার অনুপ্রেরণায় খামার করেছেন বাদপুকুরিয়া গ্রামের সালেহা আক্তার।

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর চায়ের দোকান ছিল। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আমরা সংসার চালাতে পারছিলাম না। তখন আম্বিয়া আপার কাছে যাই। তিনি আর্থিকভাবেও আমাকে সহযোগিতা করেন। আমি তিনটি গরু নিয়ে খামার শুরু করি। এখন আমার খামারে ২৫টি গরু রয়েছে। আম্বিয়া আপার সহযোগিতায় আমি আজ স্বাবলম্বী।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম আতিকুজ্জামান বলেন, ‘আম্বিয়া একজন সংগ্রামী নারী। তিনি তাঁর নিজের চেষ্টায় আজ সফল হয়েছেন। এখন অনেকেই তাঁর খামার দেখে খামার গড়ে তুলছেন। আম্বিয়ার সংগ্রাম নারীসমাজের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’

সর্বশেষ