ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৩ নভেম্বর ২০২৫
২৮ কার্তিক ১৪৩২, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ধানে নতুন বিপ্লব-ব্রি ১০৩, স্বল্প জমিতে উচ্চ ফলনে চাষির মুখে হাসি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১২ নভেম্বর ২০২৫

ধানে নতুন বিপ্লব-ব্রি ১০৩, স্বল্প জমিতে উচ্চ ফলনে চাষির মুখে হাসি

বাংলাদেশে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে। অপরদিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এ বাস্তবতায় উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উচ্চফলনশীল নতুন জাত ব্রি ধান-১০৩ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। স্বল্প জমিতে অধিক ফলনের এই জাত ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। 

মাধবপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শতাধিক কৃষক প্রায় ১০০ একর জমিতে ব্রি ধান-১০৩ রোপণ করেছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ফসল কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন। উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকরা নতুন জাতের ধান কর্তন করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

কৃষক আব্দুল বাছেদ বদু মিয়া বলেন, ‘আগে নানা জাতের ধান আবাদ করে একরপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ ধান পেতাম। এখন ব্রি ধান-১০৩ চাষে ৪০ মণেরও বেশি ফলন পাচ্ছি। এই ধান চাষে পানি কম লাগে, আর ধানও দেখতে সুন্দর ও ভারী। কৃষক এই ধানেই বেশি লাভবান হচ্ছেন।’

একই গ্রামের কৃষাণি মমতাজ বেগমের ভাষ্য, আগে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করেও এত ফলন কখনও পাননি তিনি। এখন এই জাতের ধান চাষে তাঁর আয় বেড়েছে। সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। এলাকার কৃষক সবাই এই ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষক শাহেদ মিয়া বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছি। এই ধান খরা, অতিবৃষ্টি ও বাতাসের প্রভাবেও ভালোভাবে টিকে থাকে। ফলন দেখে অবাক হয়েছি।’ 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আকতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কৃষিজমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই এখন আমাদের প্রয়োজন এমন জাত যা কম সময়, কম জমি ও কম পানি ব্যবহার করে বেশি ফলন দেবে। ব্রি ধান-১০৩ সেই চাহিদা পূরণে সক্ষম। মাত্র ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে এ ধান কাটা যায়। কৃষক চাইলে একই জমিতে বছরে তিন ফসল তুলতে পারেন, যা আমাদের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় অবদান রাখবে।’

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পার্থসারথি বিশ্বাস জানান, ‘ব্রি ধান-১০৩ জাতটি জলবায়ু সহনশীল এবং রোগবালাই ও পোকামাকড় প্রতিরোধী। এর গড় ফলন একরপ্রতি ৭ টনেরও বেশি, যা প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। চাল সাদা, ঝরঝরে এবং বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। কৃষকরা ইতোমধ্যে এর প্রতি আস্থা রাখছেন। কারণ এটি কম পরিশ্রমে বেশি লাভ দেয়।’

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শাহানা পারভীন বলেন, ‘ব্রি ধান-১০৩ হলো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জাত। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে; যাতে প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও ভালো ফলন পাওয়া যায়। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই জাত বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে বিপ্লব আনবে।’ চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ জানান,  তাঁর এলাকায় এই ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই জাতটি কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।