
নওগাঁয় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর জেলায় মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। আর ফলন ভাল হওয়ায় নওগাঁর হাট-বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম নিম্নমুখী হওয়ায় উৎপাদন খরচই উঠছে না। লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। কাঁচা মরিচ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ১০-১৫ টাকা কেজি দরে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৯৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে।
যা থেকে পাকা মরিচ উৎপাদন হবে ৯ হাজার ৬০০ টন।
জেলার বিভিন্ন মাঠে এখন দেখা মিলছে মরিচের ক্ষেত। সবুজ পাতার আড়ালে থোকায় থোকায় ঝুলছে মরিচ।
কৃষকরা স্থানীয়, সাদা ও আকাশি জাতের মরিচ আবাদ করেছেন। সকাল-বিকেল ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে বিক্রি করছেন বিভিন্ন হাট-বাজারে।
সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর সাপ্তাহিক হাটবার শুক্র ও মঙ্গলবার। কৃষকরা ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে এ হাটে মরিচ বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। পাইকার ও কৃষকদের দরকষাকষিতে চলে বেচাকেনা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ১২-১৫ টাকা কেজি। এই দামে মরিচ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না বলে জানান চাষিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব মরিচ চলে যায় ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। প্রত্যেক হাটে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার মরিচ বেচাকেনা হয়।
জেলার বদলগাছী উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান জানান, এ বছর ৮ কাঠা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। জমির চাষাবাদ, চারা রোপণ, সার ও শ্রমিকসহ যেখানে খরচ পড়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করেছেন মাত্র দেড় হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন, জমি থেকে মরিচ তুলতে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরে। আর হাটে গিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ১০-১২ টাকা কেজি। সপ্তাহে জমিতে কীটনাশক দিতে হয় ৬০০ টাকা। আয়ের চেয়ে ব্যয় হচ্ছে বেশি। তারপরও আশায় আছি আগামীতে ভাল দাম পাওয়ার।
একই গ্রামের কৃষক ডিএম ইকবাল কবির বলেন, গত বছর এ সময় প্রতি কেজি মরিচ ১২০-১৫০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে। আর এখন ১০-১২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যেখানে আমাদের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩০ টাকা কেজি। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলে কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে।
পারসোমবাড়ী গ্রামের কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন, ৩ বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় মরিচ চাষে খরচ হয় অন্তত ৩০ হাজার টাকা। যেখানে খরচ বাদে লাভ থাকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা। তবে মৌসুমের শুরু থেকেই মরিচের দাম কম। আর যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে লোকসান গুনতে হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার ব্রুজরুক আতিতা গ্রামের কৃষক রাসেল হোসেন বলেন, মরিচের অবস্থা খুবই খারাপ।
ক্ষেত থেকে মরিচ তুলতে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় ৩০০ টাকা। সাথে একবেলা খাবার এবং এক কেজি চাল। মরিচ গাছে রেখে দিলে ফুল আসবে না এবং গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই লোকসান দিয়েই মরিচ গাছ থেকে তুলতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর এ সময় খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এতে উৎপাদন কম হওয়ায় দামও বেশি ছিল। তবে এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচের উৎপাদন বেড়েছে। সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে।
তবে মরিচ ক্ষেত সতেজ ও ছত্রাকমুক্ত রাখতে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।