গাজীপুরের শ্রীপুরের সিসিডিবিতে ঝিলের জলে তিরতির করে কাঁপা ঢেউ, একপাল সাদা রাজহাঁসের সাঁতার,সব মিলিয়ে এক অপূর্ব সকাল উপভোগ করছি তরুপল্লবের এক দল প্রকৃতি বন্ধু। মোকারম হোসেন বললেন, ‘জানেন, সব কেয়াগাছে ফুল ফোটে না। এক রকমের কেয়াগাছ আছে, যেটি শুধুই আলংকারিক।’
আগমুখী বহুবর্ষজীবী আরোহী লতানো বীরুৎ প্রকৃতির উদ্ভিদ। কাণ্ড বা লতা বহু শাখায়িত, আকর্ষী সরু ও প্রসারিত। পাতা ডিম্বাকার, পানের পাতার মতো দেখতে, কিনারা কৌণিক আগা সরু ও সুচালো। একই গাছে গুচ্ছাকারে ছোট ছোট হলুদ রঙের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে, পাপড়ি পাঁচটি। ফল গোলাকার, মসৃণ, রসালো ও সাদা রোমযুক্ত। বীজ দ্বারা বংশবিস্তার ঘটে। ফুল ফোটা ও ফল ধারণের সময় জুন থেকে ডিসেম্বর। সাধারণত নদী বা জলাশয়ের তীরে ও তৃণভূমিতে এ গাছ জন্মে। অরণ্যেও দেখা যায়।
আগমুখী বাংলাদেশের একটি ঔষধি গাছ যা হাঁপানি, কাশি, হজমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের লোকচিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। অর্শ রোগের চিকিৎসায় এর ফল, হাঁপানি, কাশি ও ব্রঙ্কাইটিস, বুক জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এর পাতা। শ্বাসজনিত সমস্যায় এর শিকড়ও কাজে লাগে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় আগমুখী পাতার ক্বাথ ব্যবহার করা হয়।
ভারতের ছোট নাগপুরের মুন্ডা আদিবাসীরা এর বিচূর্ণ বীজ দেহের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা সারাতে ব্যবহার করে। এ গাছ ডায়াবেটিস, বাতজনিত গিঁটব্যথা এমনকি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসায়ও ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এ উদ্ভিদে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ কারণে এ গাছ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তনালি প্রশস্তকরণ, রক্তে শর্করা ও চর্বি কমানো, যকৃৎ সুরক্ষা, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, আলসার প্রতিরেধী, উদ্বেগ হ্রাসকারী, অণুজীববিনাশী ও অ্যান্টিপ্লেটলেট সংযোজন করার মতো বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে গবেষকদের গবেষণা থেকে জানা গেছে।
দক্ষিণ ভারতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এ গাছ বেশ ব্যবহৃত হয়, সেখানে এ গাছ থেকে প্রস্তুতকৃত ঔষধ ‘মুসুমুসুক্কি’ নামে পরিচিত। এ দেশে আগমুখীর ঔষধি গুণ ও ব্যবহার নিয়ে আরও গভীরভাবে গবেষণা হতে পারে। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে এ গাছ আছে। বাংলাদেশে এ গাছের কোনো অভাব নেই। তাই বিপন্নতা মূল্যায়নের প্রয়োজন পড়েনি।























