আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের কৃষকরা। দাম না পাওয়ায় ভেস্তে যেতে বসেছে স্বপ্ন। মাঠ বা রাস্তার ধারে পাইকারি আলু ভেদে ৬ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। এতে উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা শ্রমিকের খরচও উঠছে না। কৃষক ওপাইকার বলছেন, চার বছরের মধ্যে এবার আলুর সর্বনিম্ন দাম। ফলে কৃষকের স্বপ্নের আলু, এখন গলার ফাঁস হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় এ বছর ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আলু চাষও হয়েছে ব্যাপক। তবে আলুর দাম কম হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
জানা যায়, বাজারে অতিরিক্ত আলু সরবরাহ, হিমাগারে পুরানো আলু মজুত থাকায় কৃষকের স্বপ্ন এখন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সারের দাম বৃদ্ধি, শ্রমিকের উচ্চ মজুরিতে চাষাবাদে খরচ হয়েছে বেশ। তাই আলুর দাম কম থাকায় লাভবান হওয়ার বদলে গুনতে হচ্ছে লোকসান।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের আলু দেশে সর্বপ্রথম বাজারে উঠে থাকে। কৃষকরাও লাভবান হয়। সেই স্বপ্নে এ বছরও কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে আলু চাষ করে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভাল হলেও দাম কম পাওয়ায় লোকসান গুনছেন আলু চাষিরা। গত বুধবার আলু ভেদে ৬ থেকে ৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচতো দূরের কথা চাষাবাদে শ্রমিকের মজুরির টাকা উঠাতে পারছে না কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আলু উত্তোলন যোগ্য হলেও বাজার দর কম ও উৎপাদন খরচ না উঠায় আলু তুলছেন না অনেক কৃষক। ক’দিনের চেয়ে দাম বাড়ায় শুক্রবার ইসমাইল এলাকাসহ উপজেলায় আলু তোলার হিড়িক পড়েছে। তবুও চাষিরা বলছেন, তাদের লোকসান গুনতে হবে। গত চার বছরে এবার আলুর দাম কম।
নয়ানখাল গ্রামের কৃষক কহিনুর জানান, বুধবার আলু তুলে তারাগঞ্জ বাজারে কেজি প্রতি ৬ টাকা দামে বিক্রি করেছি। আলুতে এবার ব্যাপক লোকসান হয়েছে। আলু যেন আমাদের চাষীদের গলার ফাঁস হয়েছে।
বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুঠি গ্রামের কৃষক দুলাল জানান, আগাম আলু চাষ করে এ বছর ৪ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। পারছি না আলু খেতে রাখতে, পারছি না তুলতে, আলু যেন গলার ফাঁস হয়েছে। আগামীতে আলু চাষ নাও করতে পারি।
ইসমাইল গ্রামের কৃষক হামিদুল জানান, দুই দিন আগে আলু ভেদে ৬ থেকে ৮ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। দাম বৃদ্ধিতে শুক্রবার আলু উত্তোলন করে খেতেই ১৩ টাকা ৫০ পয়সা বিক্রি করেছি। এরপরেও আমার লোকসান হবে। আমার ভাই ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে। তারও লোকসান হবে। এ বছর আলুতে কৃষকরা লোকসানে পড়েছে।
কৃষক জয়নাল আবেদিন বৃহস্পতিবার জানান, আলু চাষে বিঘায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলুর দাম ৭-৮ টাকা কেজি। এ দামে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তো উঠছেই না, এমনকি মজুরির খরচও উঠাতে পারছি না।
পাইকার রাব্বী জানান, গত ৪ বছরের মধ্যে এবার আলু সর্বনিম্ম দাম। গত কয়েক দিনে ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি আলু ক্রয় করেছি। শুক্রবার ১২ থেকে ১৩ টাকা আলু ভেদে ক্রয় করছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন, সরবরাহ বেশি, হিমাগারে পুরনো আলু মজুদ ও গণহারে আলু উত্তোলন হওয়ায় আলুর দাম কমেছে। গত কয়েক দিনের চেয়ে শুক্রবার দাম বেড়েছে। দিন দিন আরও দাম বাড়তে পারে। তখন কৃষকরা লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে।























