রাজশাহীর চারঘাটে বজ্রপাতের ঝুঁকি কমাতে এবং পরিবেশ রক্ষায় লাগানো হাজার হাজার গাছ এখন অস্তিত্ব সংকটে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিতভাবে ডালপালা কাটার ফলে চার বছরে প্রায় ২০ হাজার গাছ মারা গেছে। এতে সরকারের কোটি টাকার বনায়ন প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে।
উপজেলা বন বিভাগ ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সূত্রে জানা গেছে, বিএমডিএ বজ্রপাত থেকে প্রাণহানি কমাতে ১০ কিলোমিটার রাস্তায় ২০ হাজার তালগাছ রোপণ করেছে। বন বিভাগ লাগিয়েছে ৫৩ কিলোমিটার রাস্তায় ৫৩ হাজার বনজ ও ফলদ গাছ। ইউনিয়ন পরিষদ ও কৃষি বিভাগ আরও কয়েক হাজার তাল ও অন্যান্য গাছ রোপণ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, কোনো পূর্বপরিকল্পনা বা সমন্বয় ছাড়াই বন বিভাগের লাগানো গাছের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে বছরে ৩-৪ বার নির্বিচারে গাছের ডালপালা এবং অনেক ক্ষেত্রে গাছের মাথার অংশ কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাটা অংশ দিয়ে পচন ধরে অনেক গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। তালগাছ বড় হতে না পারায় বজ্রপাত রোধের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
বাবুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, নির্বিচারে গাছের ডাল কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে আমার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। পরে মাফ চেয়ে আবার সংযোগ নিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে দুই দপ্তর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে। উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলছেন, নির্বিচারে গাছ কাটায় বছরে প্রায় ৫ হাজার গাছ মারা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করেও কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অত্যাচারে এখন গাছ লাগানোই বন্ধ রাখা হয়েছে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর চারঘাট জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, নিরাপত্তার স্বার্থে লাইনের ১০ ফুটের মধ্যে থাকা ডালপালা কাটা হয়। তবে বন বিভাগ এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করেনি। এখন তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চারঘাট উপজেলার সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বলেন, দুই দপ্তরের সমন্বয় না থাকলে সরকারি টাকা যেমন নষ্ট হবে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হবে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে বজ্রপাত থেকে বাঁচতে তালগাছগুলো রক্ষা করা জরুরি।
পরিবেশবিদদের মতে, ভবিষ্যতে গাছ রোপণ ও বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা এবং ভূগর্ভস্থ তার বা বিকল্প পথ ব্যবহার করা প্রয়োজন। অন্যথায় সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ার এই মহৎ উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
গ্রিন ভয়েস চারঘাট উপজেলার আহ্বায়ক শাহাদাতুজ্জামান রিমন বলেন, বজ্রপাত নিরোধ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য যে গাছ লাগানো হলো, সেগুলো যদি সমন্বয়হীনতায় নষ্ট হয়ে যায়, তবে এ উদ্যোগের সুফল মিলবে না।























