কীটনাশক বা বালাইনাশক উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানি সহজ করা এবং শুল্ক রেয়াতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলে কীটনাশক আমদানির ওপর নির্ভরতা কাটবে। দেশে উৎপাদন হবে সব ধরনের বালাইনাশক। এতে ওষুধ শিল্পের মতো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির দুয়ার উন্মোচিত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গত ২১ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপনে এমন আভাস দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বালাইনাশক বা কীটনাশক উৎপাদন ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াতের দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএমএ)। কীটনাশক খাতের দেশীয় উদ্যোক্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচন’ শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএএমএর সভাপতিসহ ১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানি বিষয়ে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে প্রক্রিয়ায় উপকরণ ও কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন, মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, মন্ত্রণালয় তার অধস্তন দপ্তরের মাধ্যমে অনুরূপ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারে। এতে ওষুধের মতো স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক বা কীটনাশক উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। আমদানির বিকল্প শিল্প তৈরি হবে। রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত– উপকরণ বা কাঁচামালের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমদানি সহজীকরণ এবং এনবিআরের শুল্ক রেয়াতের জন্য পাঠানো হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে কীটনাশকের বাজার সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার। এর ৫৫ শতাংশ বা চার হাজার ১২৫ কোটি টাকার বাজার রয়েছে ৭টি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। আর স্থানীয় আমদানিকারকরা চাহিদার প্রায় ৪১ শতাংশ বা তিন হাজার ৭৫ কোটি টাকার কীটনাশক আমদানি করছে। কীটনাশকের বাজারে দেশি উৎপাদনকারীদের হিস্যা ৪ শতাংশ বা ৩০০ কোটি টাকার।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কীটনাশকের আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার ৫ শতাংশ। এর বিপরীতে কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত। এ কারণে চাহিদার বড় অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। বালাইনাশক মূলত ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন– পোকামাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমনে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানান, ফিনিশড পণ্যের পরিবর্তে যদি কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অবাধ এবং সহজ করা হয়, তাহলে এসব পণ্যের দাম কমপক্ষে ৩০ ভাগ কমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যাবে। স্থানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার, এসিআই ও স্কয়ারসহ ২০টি কোম্পানি উৎপাদনে আছে।
এ বিষয়ে বিএএমএ সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার উৎপাদনকারীদের যৌক্তিক দাবি আমলে নিয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব এনবিআরের। এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে দুই-তিন বছরের মধ্যে আর কোনো বালাইনাশক আমদানি করতে হবে না। ওষুধ শিল্পের মতো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।























