প্রতিদিন সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে শুরু হয় হাঁকডাক। কৃষক বাগান থেকে কলা এনে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখেন। শ্রমিকদের কেউ বাছাই করছেন, কেউ বা প্যাকেজিংয়ে ব্যস্ত। ট্রাকে তুলে দিচ্ছে আরেকটি দল। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার এসে নিয়ে যাচ্ছেন কাঁদি কাঁদি কলা। হাটজুড়ে দিনভর চলে কর্ম ব্যস্ততা।
এ চিত্র দিনাজপুরের দশমাইল হাটের। দেশব্যাপী সুখ্যাতি রয়েছে এখানকার সাগর কলার। ব্যস্ততম এই হাটে প্রতিদিনই ৮০ লাখ থেকে কোটি টাকার কলা বেচাকেনা হয়। আগস্ট মাসে কলা বাজারজাত শুরু হয়। চলে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসেন। কৃষকদের সঙ্গে দরদাম করে কলার কাঁদি ট্রাকে তুলে নিয়ে যান। লাভবান হওয়ায় কৃষকের বেড়েছে আগ্রহ, বাড়ছে আবাদি জমির পরিমাণ। কৃষি বিভাগের হিসাবে, চলতি বছরে এই জেলায় ১৫০ কোটি টাকার কলার বেচাকেনা হবে।
একসময় শুধু জেলার কৃষকরা দশমাইল হাটে কলা সরবরাহ করতেন। বেচাবিক্রি বাড়ায় এর পরিধি বেড়েছে। হাটটি এখন দেশের অন্যতম কলার বৃহৎ বিপণনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী এলাকার কৃষকরাও এখানে কলা নিয়ে আসেন। প্রতিদিন কলা বাছাই, প্যাকেজিং, ট্রাকে তোলা, ট্রাকচালক ও হেলপার, হিসাব সহকারীর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন শ্রমিকরা। এ পেশায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক নিয়োজিত।
ঢাকা থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানকার সাগর কলা খুব ভালো। মালভোগ, সবরি, চিনি চাম্পাসহ বিভিন্ন জাতের কলাও বিক্রি হয় এই হাটে। এ বছর কলার দাম একটু বেশি। এক কাঁদি সাগর কলা কিনতে হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। গত বছর ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম ছিল। এবার চাহিদা বাড়ায় দাম বেশি হলেও মোটামুটি লাভ থাকছে।
মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কলার দাম বেড়েছে, পাশাপাশি বেড়েছে ট্রাকভাড়াও। ফলে লাভের মুখ তেমন দেখা যাচ্ছে না। এখানকার কলা ভালো হওয়ায় বাজারে চাহিদা রয়েছে। খরচ বাড়লেও এখান থেকেই কলা কিনি।’
সদরপুর এলাকার শ্রমিক রঞ্জন রায় বলেন, ‘বছরে তিন মাস এখানে কাজ করি। ট্রাকে কলা লোড করা, বাঁধাই করা, সাজিয়ে দেওয়ার কাজগুলো করি। খাটুনি হয় ঠিক, কিন্তু উপার্জনও ভালো। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা উপার্জন হয়।
কাহারোলের নয়াবাদ এলাকার কৃষক গিরেন রায় বলেন, এক কাঁদি কলার দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। গত বছর দাম কম ছিল। এবারে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু বেশি নিতে হচ্ছে।
একই এলাকার ফিরোজ বলেন, জৈব সার বা গোবর সার দিয়ে কলা চাষ করেছি। রাসায়নিক সার দিই না বললেই চলে। এরপরও উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। খরচ কম, লাভ বেশি। আগামী বছর জমির পরিমাণ আরও বাড়াবো।
দশমাইল হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাকবোঝাই কলা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী থেকে কৃষকরা কলা নিয়ে আসেন। প্রতিদিন হাটে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার কলা বেচাকেনা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, দিনাজপুরে চলতি বছরে ১ হাজার ৩৩৭ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। গত বছরে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১০০ হেক্টর। এবারে আবাদ বেড়েছে এবং আগামীতে আরও বাড়বে। চলতি বছর জেলা থেকে ১৫০ কোটি টাকার কলা বিক্রি হবে আশা করছি।























