দেশের অন্যতম বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে গত মৌসুমের শুরুতে বেশি লাভের আশায় হিমাগারে আলু রেখেছিলেন উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ার আশায় এতদিন তারা হিমাগার থেকে আলু বের করেননি। এখন সেই আলু গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাম না বাড়ায় বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
এদিকে, নতুন আলু আবাদের মৌসুম সমাগত। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কৃষক জমিতে নতুন করে আলুতে স্বপ্ন বুনবেন। অন্যদিকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে হিমাগার থেকে আলু না বের না করলে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু হিমাগার থেকে এখন আলু তুললে বস্তা প্রতি (১ বস্তায় ৫০ কেজি) কমপক্ষে ৭৫০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই জন্য অনেক আলু ব্যবসায়ী কোল্ড স্টোরেজে রাখা তাদের আলু নিতে আগ্রহী নন।
১০ হিমাগারে ৭ লাখ ৬৩ হাজার বস্তা আলু
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর সিরাজদীখানে আট হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ টন। উত্তোলনের সময় জমিতেই অনেক কৃষক আলু বিক্রি করেছেন। বেশি লাভের আশায় অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগারে আলু মজুত রেখেছিলেন। বর্তমানে উপজেলার ১০টি হিমাগারে প্রায় সাত লাখ ৬৩ হাজার বস্তা আলু মজুত রয়েছে। প্রতি বস্তার ওজন ৫০ কেজি ধরে সংরক্ষিত মোট আলুর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৮ হাজার ১৫০ টন। প্রতি বস্তায় ৭৫০ টাকা লোকসান ধরলে ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা।
বিপাকে ১০ হাজার চাষি
উপজেলা লতব্দী ইউনিয়নের আলু ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন ঝন্টু বলেন, চলতি বছর ছয় হাজার বস্তা আলু মজুত করেছিলাম। এর মধ্যে এক হাজার বস্তা বিক্রি করেছি আর পাঁচ হাজার বস্তা আলু এখনও রয়েছে সিরাজদীখানের নেপচুন কোল্ড স্টোরেজ। প্রতি বস্তায় কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া ৩০০ টাকা। সব মিলিয়ে বস্তাপ্রতি আমার খরচ হয়েছে এক হাজার ১০০ টাকা। সেই আলু এখন বিক্রি করতে গেলে প্রতিবস্তা আমার ৯০০ টাকা লোকসান হয়। সেই হিসাবে এ বছর ৫০ লাখ টাকার লোকসানের কবলে পড়েছি।
এই ব্যবসায়ীর মতো সিরাজদীখানের প্রায় ১০ হাজার আলু চাষি ও ব্যবসায়ীর একই অবস্থা। তারা জানান, এ বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকা লোকসানের কবলে পড়েছেন উপজেলার আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ইছাপুরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান হীরা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আলু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ বছর নাহার কোল্ড স্টোরেজে দুই হাজার ৭০০ বস্তা আলু সংরক্ষণ করে ১৩ লাখ টাকা লোকসানে পড়েছি। এ বছরের মতো লোকসান আর কখনও হয়নি।
উপজেলার বয়রাগাদী ইউনিয়নের ভুইরা গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, আমি ফয়েজ কোল্ড স্টোরেজে ৭০০ বস্তা আলু মজুত করেছিলাম। প্রতি কেজি ১১ টাকা দরে ৪০০ বস্তা আলু বিক্রি করেছি। বর্তমানে আলু কেজিপ্রতি ৮ থেকে ৯ টাকা দাম উঠছে। এই দামে বিক্রি করতে গেলে পুরোটাই লোকসান হবে।
সিরাজদীখান উপজেলার তালতলা বাজারের ফয়েজ কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার আব্দুর রহিম বলেন, সরকার আলুর দাম কেজি প্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও এখনও সেই দামে বিক্রি বাস্তবায়ন হয়নি। প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় আলুর দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে হিমাগার মালিক ও কৃষক– দুই পক্ষেরই লোকাসন হচ্ছে।
সিরাজদীখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, এবার আলুর বাম্পার ফলনের কারণে দাম কম। সরকার আলুর দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে। আমরা স্থানীয় হিমাগারগুলোতে ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়ে দিয়েছি, যাতে এই দাম বাস্তবায়িত হয়। দেশে প্রচুর আলু মজুত থাকায় ক্রেতারা বেশি দামে কিনছেন না,তাই দামও বাড়ছে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দাম বাড়াতে। সূত্র: সমকাল























