
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীতে গত এক সপ্তাহে জোয়ারের পানি আকস্মিক বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের ৭ শ একর জমির বাদাম ফসল ডুবে গেছে। নদীর পার ঘেঁষে নিচু জমিতে আবাদি বাদাম ফসলের পাশাপাশি পাকা ও আধাপাকা তিল ফসল মাঠও প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা এ বছর ব্যাপক ক্ষতির শিকার বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিনে পদ্মার চরাঞ্চলে দেখা যায়, উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নে পদ্মা পারে চরকল্যানপুর মৌজা, দিয়ারা গোপালপুর মৌজা ও ঝাউকান্দা চরের প্রায় ৫ শ একর জমির বাদাম ও তিল ফসল ডুবে গেছে।
এ ছাড়া উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নে পদ্মা পারের আরজখার ডাঙ্গী ও চর শালেপুর মৌজার প্রায় ৫০ একর জমির ফসল এবং গাজীরটেক ইউনিয়নের মাঝি ডাঙ্গী, বঙ্গেশ্বর ডাঙ্গী, জয়দেব সরকার ডাঙ্গী গ্রামের আরো ৫০ একর বাদাম ও তিল ফসল ডুবে গেছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে একই সঙ্গে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের আ. গফুর মৃধা ডাঙ্গী গ্রাম, কামার ডাঙ্গী ও মাথাভাঙ্গা গ্রামের আরো ১০০ একর জমির বাদাম ফসলি মাঠ ডুবু ডুবু অবস্থায় রয়েছে বলেও জানা যায়। এসব পদ্মার চরে ডুবে যাওয়া ফসলি মাঠে নারী পুরুষ মিলে পানির নিচ থেকে বাদাম তুলতে দেখা গেছে।
কৃষকেরা জানান, বাদাম চাষে যে ব্যয় হয়েছে, তার অর্ধেকও উঠবে না।
অসময়ে তিস্তায় পানি এসে আমাদের ক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছে। তারা অনেকেই ঋণ করে বাদাম চাষ করেছিলেন, এখন সেই ঋণ পরিশোধ নিয়ে পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।
চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের দিয়ারা গোপালপুর মৌজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবেদ আলী (৫৫) বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নিজেদের সমস্ত পুঁজি খাটিয়ে প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে বাদাম ফসলের আবাদ করেছিলাম। মাঠের বাদাম ফসলগুলো প্রায় পাকা পাকা অবস্থায় চলে আসছিল।
কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা পারে অকাল বন্যা দেখা দেওয়ায় সমস্ত বাদাম ফসলি মাঠ ডুবে গেছে। এখন হাঁটু পানির নিচ থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে কিছু বিনষ্ট বাদাম ফসল উঠাচ্ছি কিন্তু এসব বাদামের তেমন কোনো বাজার মূল্য পাওয়া যাবে না।
চরকল্যানপুর মৌজার বাদাম চাষি কবির খালাসি (৪৬) জানান, প্রায় দেড় একর জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। ক্ষেত নিচু হওয়ায় পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন নিরুপায় হয়ে বাদাম তুলতে হচ্ছে।
কিন্তু ফলন একেবারেই খারাপ, বেশিরভাগ বাদামের ভিতরে দানা নেই। বাড়িতে বাদাম নিয়ে যেতে প্রায় ৯০ হাজার টাকা খরচ হবে। এবারে বড় অঙ্কের লোকসান হবে।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা জানান, ইউনিয়নের ফসলি জমিগুলো নিচু হওয়ায় ফলে অকাল বন্যায় অন্তত ২ হাজার বিঘা জমির বাদাম ও তিল ফসল বিনষ্ট হয়েছে। পদ্মায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে চরের কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকলকে আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মামুনুর রহমান বলেন, অকাল বন্যায় পদ্মাপারে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠের জরিপ ও পরিদর্শন কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সব ব্যবস্থা করা হবে।