
যশোরে আর্সেনিক প্রবণ এলাকায় নিরাপদ ধান উৎপাদনে সফলতা এসেছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় জাপানের একটি সংস্থা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ পদ্ধতিতে পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি উৎপাদনের হারও বেশি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
যশোরের চৌগাছায় ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮ জন। এর মধ্যে ১৮ জন মারা গেছেন। নতুন উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি সম্প্রসারণ করা গেলে আর্সেনিক প্রবণ এলাকায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি স্থানীয়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে আসবে বলে মনে করেন গবেষকরা।
আর্সেনিক প্রবণ এলাকায় ধানের শীষ বের হওয়ার তিন সপ্তাহ আগে এবং শীষ বের হওয়ার চার সপ্তাহ পরে সংস্থাটির উদ্ভাবিত কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। এই পদ্ধতিতে মাটিতে যে আর্সেনিক রয়েছে তা পানির মাধ্যমে উপরে উঠতে পারে না। পরীক্ষায় দেখা গেছে, উৎপাদিত ধানে আর্সেনিকের মাত্রা থাকে ০.২ শতাংশ। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি সীমার অনেক নিচে।
গবেষক(নারো) কেন নাকামুরা বলেন, ‘ধানের শীষ বের হবার ৩ সপ্তাহ আগে এবং শীষ বের হবার ৪ সপ্তাহ পরে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিতে হয়। আর্সেনিক ভারী হওয়ায় পানির তলানিতে জমা হয়। এই পদ্ধতিতে মাটিতে যে আর্সেনিক রয়েছে তা পানির মাধ্যমে উপরে উঠতে পারে না।’
জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ক্যামিয়া সেনসি বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ধানে আর্সেনিকের মাত্রা পাওয়া গেছে মাত্র দশমিক ২ শতাংশ, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সীমার নিচে।’
যশোরের চৌগাছায় আর্সেনিকমুক্ত ধান চাষে এই সফলতা পেয়েছে জাপানের একটি সংস্থা। গবেষণায় তাদের সহায়তা করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পারমাণবিক কৃষি ইনস্টিটিউট এবং জাতীয় কৃষি খাদ্য গবেষণা সংস্থা।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘টেকনোলজিটা যদি আমরা আরও বেশি আয়ত্ত করতে পারি, এই এলাকায় যদি আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে পারি, কৃষকদের আরও বেশি আয়ত্ত করতে বলি তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে তা আমাদের সবাইকে উপকৃত করবে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আর্সেনিক টলারেন্ট ভ্যারাইটি যদি আমরা ডেভেলপ করি আমাদের প্রজেক্টের শেষে তখন আমরা একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করব যাতে আর্সেনিক থাকলেও তা মাটি থেকে কম নিবে। এটাই আমাদের মূল টার্গেট।’
আধুনিক এ প্রযুক্তিতে চাষাবাদে পানির ব্যবহার শতকরা ৭০ ভাগ কমে আসে। ফলে ধানে আর্সেনিকের প্রভাব কমে আসে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
উপজেলা কৃষি অফিসার মুশাব্বির হোসাইন বলেন, ‘এ পদ্ধতিটা যদি আমরা সম্প্রসারণ করতে পারি তাহলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে যাবে, পানিতে আর্সেনিক কমে যাবে, পানি সাশ্রয়ী হবে।’ জাপানি সংস্থার আধুনিক এই পদ্ধতিতে আশানুরূপ ফলন পেয়ে খুশি আর্সেনিক প্রবণ এলাকার কৃষকরাও।
কৃষকরা জানান, ধীরে ধীরে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছিলো। কিন্তু এই পদ্ধতিতে চাষ করলে লেয়ার আর নিচে নামবে না। আশেপাশের এলাকার ধানের থেকে এই ধানের গোছা মোটা হয়েছে, ধানের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।