মেঘনার ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের বয়ারচর এলাকায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। বসতভিটা ও সর্বস্ব হারিয়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে হাজারো মানুষের।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এক সময় প্রায় তিন লাখ মানুষের কোলাহলে মুখর ছিল বয়ারচর এলাকা। কয়েক দশক আগে এখানে ছিল লাখো মানুষের জীবনের স্পন্দন। ভয়ংকর নদীভাঙন কেড়ে নিয়েছে সব। দুই দশক আগে নদী রক্ষায় নির্মিত বেড়িবাঁধ কিছুটা স্বস্তি দিলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বর্ষা পেরোতে না পেরোতেই ভাঙনের মুখে এখন বাকি অল্প কিছু জমি আর অসহায় কয়েকটি পরিবার। এ বছরের বর্ষায় রামগতি ব্রিজঘাট থেকে চেয়ারম্যানঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের একাধিক অংশ ভেঙে যায়। স্লুইস গেট এলাকার বাঁধ ভেঙে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়দের শঙ্কা, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই সেখানে যদি কংক্রিট ব্লক না ফেলা হয়, তাহলে বাকি অংশও নদীতে মিশে যাবে।
বয়ারচরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (৭০) জানান, তাঁর জীবনে তিন বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন। আগে নদী ছিল বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে, এখন ঘরের বারান্দা ছুঁয়েছে নদী। তাঁর দুই ছেলে ও চার মেয়ে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ আবার সরকারি জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঘর তুলে জীবনযাপন করছেন।
একই গ্রামের আব্দুল খালেক (৮০) জানান, তিনি ৪০ বছর ধরে এই চরে বসবাস করছেন। চারবার নদীতে তাঁর বসতঘর বিলীন হয়েছে। আবার ভাঙলে কোথায় যাবেন, জানেন না।
রফিকুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, বয়ারচরে এখন প্রতিদিন জোয়ার আসে, আবার নামে। রাস্তাঘাট, স্কুল, মাদ্রাসা সব নদীতে চলে যাচ্ছে। মনে হয় নদী তাদের গ্রাম গিলে ফেলছে।
চর গাজী ইউপির সদস্য মো. দিদার বলেন, বর্ষার আগেই টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হলে উপজেলার মানচিত্রে পরিবর্তন আসবে। এক সময়ের জনবহুল বয়ারচর তখন শুধু স্মৃতিতে থেকে যাবে এক হারিয়ে যাওয়া চরের নাম হিসেবে।
স্থানীয় কৃষক মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুধু নদীভাঙন ঠেকাতে চাই না, আমরা বাঁচাতে চাই আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের জীবন।’
লক্ষ্মীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান খান বলেন, রামগতির বয়ার চরে মেঘনার ভাঙন নতুন নয়, এটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান। ভাঙন রোধে বিভিন্ন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড অস্থায়ীভাবে কাজ করে জনগণকে সহায়তা করেছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ‘সবুজ পাতা প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্পে রামগতির বয়ারচরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী সংরক্ষণ কাজ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।























