ঢাকা   সোমবার
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
১৪ পৌষ ১৪৩২, ০৯ রজব ১৪৪৭

ছাগলের টিটেনাস রোগের কারণ, চিকিৎসা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:১২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ছাগলের টিটেনাস রোগের কারণ, চিকিৎসা

যে কোন অপারেশন, খাসীকরণ, বাচ্চা প্রসবের সময় ছাগীতে বা ছাগল ছানার নাভীতে ক্ষত সৃষ্টি হলে উক্ত ক্ষতে যদি ক্লোস্টিডিয়াম টিটানি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে তখন টিটেনাস রোগ হয়। এ রোগে আক্রান্ত ছাগলের চোয়াল, গলা ও দেহের অন্যান্য অংশের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়। দাঁতের মাড়ির মাংসপেশী শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে দাঁত লেগে যায় বলে ছাগল খেতে পারে না। খিঁচুনি দেখা যায়, মুখ থেকে লালা ঝরে, প্রথম দিকে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং শেষ দিকে তাপমাত্রা কমে যায়, দেহ শক্ত হয়ে বেঁকে যায়, পা ও ঘাঁড় শক্ত হয়ে যায় বলে আক্রান্ত ছাগল চলাফেরা করতে পারেনা এমনকি দাড়াতেও পারেনা। তীব্র আক্রান্ত ছাগল কয়েকদিনের মধ্যে মারা যায়। একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী টিটেনাস আক্রান্ত ছাগলকে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। 

এ রোগ প্রতিরোধের জন্য নিম্নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়-

১. খোঁজাকরণ, নাড়ি কর্তন, লোম কাটাসহ যে কোন ধরণের অপারেশনের সময় ছাগলকে টিটেনাস টক্সয়ড/এন্টি টিটেনাস সিরাম ইনজেকশন করতে হবে।
২. ডেটল, সেভলন প্রভৃতি এন্টিসেপটিক দিয়ে ক্ষতস্থান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এক বছর পরপর দু’বার ছাগীকে এন্টিটিটেনাস সিরাম/টিটেনাস টক্সয়ড ইনজেকশন প্রদান করলে এ রোগের আশংকা অনেক কমে যাবে।

ছাগলের ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস রোগ প্রতিরোধে করণীয়ঃ ছাগলের ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। ধনুষ্টঙ্কার ছাগলের খুবই মারাত্মক রোগ যা ক্লোসট্রিডিয়াম টিটেনি নামক জীবাণুর বিষ দ্বারা হয়ে থাকে। ক্লোসট্রিডিয়াম জীবাণুর স্পোর মাটি হতে ক্ষতের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। এ রোগে ছাগলে বাচ্চার ব্যাপক মৃত্যু হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাচ্চা যখন খাসি করা হয় তার পরে।

ধনুষ্টঙ্কার রোগের লক্ষণসমূহঃ ধনুষ্টঙ্কার রোগের সুপ্তাবস্থা ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত প্রাণীর চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়, মাথা, ঘাড়, পা এবং লেজ শক্ত হয়ে যায়। চোয়াল বন্ধ হয়ে যায়। মুখ হতে খাবার পড়ে যায় ও লালা ঝরতে থাকে। খিঁচুনী শুরু হয় এবং মারা যাওয়ার পূর্বে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (১০৮-১১০০ফা.)। মৃত্যুর হার অনেক সময় ৮০%।

ধনুষ্টঙ্কার রোগের চিকিৎসাঃ ১। ১৫০০ থেকে ৩০০০ ইউনিট এন্টিটক্সিন শিরায় প্রয়োগ করার ৬ ঘন্টা পর মাংসে অথবা চামড়ার নীচে পুনরায় ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে।

২। ক্ষত পরিষ্কার করে বাতাসের সংস্পর্শে এনে হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে এবং পেনিসিলিন প্রয়োগ করতে হবে।

ধনুষ্টঙ্কার রোগ প্রতিরোধঃ যে কোনো অপারেশনের সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। অপারেশনের আগে ১ মিলি টিটেনাস টক্সয়েড মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। বাচ্চা প্রসবের আগে ছাগীতে এবং প্রসবের পর বাচ্চাতে ১ মিলি করে টিটেনাস টক্সয়েড মাংসে প্রয়োগ করতে হবে।

রোগের কারণ-
ব্যাকটেরিয়া: ক্লোস্ট্রিডিয়াম টেটানি ব্যাকটেরিয়ার স্পোর (spores) মাটিতে, ধুলোয় বা মলমূত্রে থাকে।

সংক্রমণ: কোনো গভীর ক্ষত, ধারালো বস্তুর আঘাত, নখ বা সুইয়ের খোঁচা, অথবা প্রসবের সময় নাভিতে ক্ষত হলে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া ঘটায়।

ঝুঁকিপূর্ণ সময়: অপারেশন, খাসীকরণ, বা বাচ্চার জন্মের সময় ক্ষত হলে এই ঝুঁকি বাড়ে। 
লক্ষণসমূহ:

মাংসপেশী শক্ত হওয়া: চোয়াল, ঘাড়, এবং শরীরের অন্যান্য অংশের মাংসপেশী শক্ত ও অনমনীয় হয়ে যায়, যা ‘লক-জ’ (Lock-jaw) নামে পরিচিত।

খিঁচুনি: পেশীতে তীব্র খিঁচুনি হয়, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে এবং বারবার হতে থাকে।

শারীরিক ভঙ্গিমা: শরীর ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যায় (opisthotonus)।

খাবার ও জল পানে অক্ষমতা: চোয়ালের পেশী শক্ত হওয়ায় খেতে ও জল পান করতে পারে না।

জ্বর ও শ্বাসকষ্ট: তীব্রতা বাড়লে জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং অবশেষে মৃত্যু হতে পারে। 

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা-
টিকা (Vaccination): CDT (Clostridial Diphtheria Tetanus) টিকা ছাগলকে এই রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। এটি পর্যায়ক্রমে দিতে হয় (যেমন প্রথম ডোজ, এরপর ২য় ও ৩য় ডোজ নির্দিষ্ট বিরতিতে)।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ক্ষতস্থান পরিষ্কার রাখা এবং জীবাণুমুক্ত রাখা জরুরি।

চিকিৎসা: আক্রান্ত হলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসার মধ্যে অ্যান্টিটক্সিন এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, তবে নিরাময়ের সম্ভাবনা কম থাকে। 

প্রতিরোধই মূল: যেহেতু এটি একটি মারাত্মক রোগ, তাই প্রতিরোধমূলক টিকাদান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই ছাগলকে এই রোগ থেকে বাঁচানোর সেরা উপায়।