ঢাকা   শুক্রবার
২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
১১ পৌষ ১৪৩২, ০৬ রজব ১৪৪৭

রাজশাহীর বাথানের ঐতিহ্য হারালেও মহিষ পালনে সম্ভাবনা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:১২, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজশাহীর বাথানের ঐতিহ্য হারালেও মহিষ পালনে সম্ভাবনা

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দক্ষিণে পদ্মার চরাঞ্চল। এসব চর ভাটায় জেগে ওঠে, জোয়ারে ডুবে যায়। একসময় এই চরেই ছিল মহিষের বাথান। সবুজ ঘাস খেয়ে মহিষগুলো বড় হতো। প্রতিদিন বাথান থেকে কয়েক টন দুধ উৎপাদন হতো। সেই দুধের ঘি ও দই সারাদেশে পরিচিত ছিল। কিন্তু নদীভাঙন, চাষাবাদ ও বসতবাড়ি গড়ে ওঠায় এখন চরাঞ্চলে আর খালি জায়গা নেই। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে বাথানের ঐতিহ্য। মহিষ এখন চর ছেড়ে বসতবাড়ি ও খামারে আশ্রয় নিচ্ছে।

তবে চরের ঐতিহ্য কমে গেলেও সে জায়গা দখলে নিয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগ। দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। আধুনিক পদ্ধতি ও উন্নত জাতের মাধ্যমে অনেক খামারি লাভবান হচ্ছেন। এতে নতুন করে আশার আলো দেখছেন এলাকার মানুষ।

এমনই একজন পলাশিফতেপুর গ্রামের আইনুল হক। আগে চরেই দেশি জাতের মহিষ পালন করতেন। এখন নিজ বাড়িতে খামার গড়েছেন। তাঁর খামারে ৯টি গাভি মহিষ আছে। প্রতিটি মহিষ থেকে দিনে তিন থেকে ছয় কেজি দুধ পাওয়া যায়। দুধ বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকায়। খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রায় দুই-তিন লাখ টাকা লাভ হয়।

খামার করে সাফল্য এসেছে আতারপাড়ার খোশ মোহাম্মদের। তাঁর খামারে একটি ষাঁড়সহ ১৩টি মহিষ আছে। এর মধ্যে ছয়টি দুধ দেয়। মহিষ দেখাশোনার জন্য মাসে আট হাজার টাকায় একজন রাখাল রেখেছেন। খোশ মোহাম্মদ বলেন, গরুর তুলনায় মহিষ পালনে খরচ কম, লাভ বেশি। ঠিকভাবে খাবার দিলে একটি মহিষ দুই থেকো তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়।

জসিম উদ্দিনের খামারে একটি ষাঁড়সহ ১১টি মহিষ আছে, যার মধ্যে ছয়টি দুধ দেয়। জসিম উদ্দিন জানান, প্রতিটি মহিষের পেছনে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা খরচ হয়। খড় কিনতে ১০০ আঁটি লাগে এক হাজার ৫০০ টাকায়। বর্তমানে দুধের দাম কিছুটা কম বলে জানান তিনি।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহিষের গোবর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে বছরে কয়েক হাজার টাকা সাশ্রয় হয়। দুধের পাশাপাশি মহিষের বাচ্চা বিক্রিও আয়ের বড় উৎস। তবে এলাকায় এখনও উন্নত জাতের মহিষের প্রজনন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। দেশি জাতের মহিষ দিনে তিন থেকে ছয় কেজি দুধ দিলেও মুররাহ্ জাতের মহিষ থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি দুধ পাওয়া যায়। মাংসও বেশি হয়। তাই উন্নত জাতের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ১৩টি খামার আছে। এ ছাড়া অনেকেই বাড়িতে মহিষ পালন করছেন। সব মিলিয়ে উপজেলায় প্রায় এক হাজার মহিষ রয়েছে। খামারিদের ভ্যাকসিন, কৃমিনাশকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।