মাগুর মাছ উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রনের একটি চমৎকার উৎস, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি হাড় ও জয়েন্টের সমস্যা, রক্তাল্পতা এবং দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দ্রুত ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে। বিশেষ করে রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
মাগুর মাছের উপকারিতা:
উচ্চ প্রোটিনের উৎস: এতে প্রচুর পরিমাণে উচ্চমানের প্রোটিন থাকে, যা শরীরের পেশী গঠন ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য।
হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী: এতে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
রক্তাল্পতা দূর করে: এতে থাকা আয়রন রক্তে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে, যা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মাগুর মাছ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক: এটি শরীরের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে।
দ্রুত শক্তি যোগায়: এটি দ্রুত হজম হয় এবং শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর: এতে ভিটামিন এবং খনিজ লবণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
দেশি মাগুর বনাম থাই মাগুর: দেশি মাগুর পুষ্টির জন্য উপকারী হলেও, থাই মাগুর মাছের কিছু ক্ষতিকারক পরজীবী থাকতে পারে এবং এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
দেশি মাগুর চেনার উপায় :- পিঠের রং হলুদ এবং হালকা কালচে, পেটের দিকে একেবারে হলদে।মাথা ও চোয়াল ছোট এবং মুখ সূচালো।
আফ্রিকান মাগুর চেনার উপায় :- গায়ের রং ছাই বর্ণের, পেটের দিক ধূসর-সাদা।আফ্রিকান মাগুরের মাথা ও পেট দেশি মাগুরের মাথা এবং পেটের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বড়, মুখ কম সূচালো। চোয়াল অনেক খানি বিস্তৃত গায়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়।
যেহেতু অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া পোনা অবস্থায় হাইব্রিড মাগুর, আফ্রিকান মাগুর ও দেশি মাগুর চেনার উপায় নেই। তাই পোনা কেনার আগে অবশ্যই বিশ্বস্ত হ্যাচারী থেকে পোনা কিনবেন। যদি ভুলক্রমে দেশি মাগুর না কিনে হাইব্রিড বা আফ্রিকান মাগুর কিনে নেন তাহলে বিপদে পড়বেন।
মাগুর মাছ চাষের পুকুর নির্বাচন: পুকুর প্রস্তত, রেনু চাষ পদ্ধতি সবই শিং মাছের চাষ পদ্ধতির মতোই।সুতরাং এখানে আলাদা করে আলোচনা করলাম না শিং মাছ চাষের পোস্ট গুলো পড়লেই বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
মাগুর মাছের একক চাষ :- শতাংশে ২০০ পিচ মাগুরের পোনা, ২ পিচ করে সিলভার কার্প মজুদ করবেন। খাবার হিসেবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ভাসমান খাবার খাওয়াতে হবে। মাগুর যেহেতু চাহিদার অতিরিক্ত খাবার খায় না, তাই কোন পরিমাণ নির্ধারন না করে যতক্ষণ খাবার খেতে চাই খেতে দিবেন।
মাসিক পরিচর্যা :- ১৫/২০ দিন পর পর ২০% পানি পরিবর্তন করে চুন প্রয়োগ করবেন।পরদিন জীবাণুনাশক আর লবণ প্রয়োগ করবেন। মাঝেমধ্যে খাবারের সাথে এনজাইম, লিবারটনিক ও ভিটামিন সি মিশিয়ে ৩/৫ দিন খাওয়াবেন।
মাগুরের মিশ্রচাষ :- পাঙাশ, পাবদা, গুলসা, টেংরা এবং কার্পমাছের সাথে সাথী ফসল হিসেবে শতাংশে ১৫/২০ পিচ মাগুরের পোনা মজুদ করতে পারেন। মিশ্রচাষের ক্ষেত্রে মাগুরের জন্য আলাদা ভাবে খাবার দিতে হবে না।
রোগবালাই :- ফাঙ্গাল ডিজিজ, বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্টেরিয়া ও ড্রপসি রোগে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। মজুদ ঘনত্ব ঠিক রেখে পানির প্যারামিটার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে এবং সুষম খাবার খাওয়ালে আশা করা যায় মাগুর চাষে তেমন কোন সমস্যা হবেনা।
বাজারজাত :- যেহেতু মাগুর মাছের অধিক উৎপাদন সম্ভব নয়, তাই এখনো বাজারে মাগুরের ভালো দাম রয়েছে।ব্রুড হিসেবে বিক্রি করতে পারলে প্রতি কেজি ৬০০/৭০০ টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন। আর বাজারে বিক্রি করলেও প্রতি মন ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
মাগুর মাছ চাষের মেয়াদকাল ৮ থেকে ১০ মাস। খাবারের এফ,সি,আর ১৪শ গ্রাম থেকে ১৬শ গ্রাম। সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে মাগুর মাছ চাষ করলে অধিক মুনাফা করা সম্ভব।























