ঢাকা   শনিবার
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
১২ পৌষ ১৪৩২, ০৭ রজব ১৪৪৭

সমন্বিতভাবে নোনাপানির গলদা চিংড়ি চাষ করে সফল

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩২, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

সমন্বিতভাবে নোনাপানির গলদা চিংড়ি চাষ করে সফল

স্বাদু পানির পুকুরে মাছ চাষ– গ্রামবাংলায় পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু সেই চেনা পানিতেই যদি জন্ম নেয় নতুন সম্ভাবনা, বদলে যায় কৃষকের ভাগ্য, তখন সেটি হয়ে ওঠে আর্থসামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। নওগাঁ সদরের শৈলগাছী গ্রামের এমনই এক পুকুরে ঘটছে নীরব পরিবর্তন। সেখানে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে সমন্বিতভাবে নোনাপানির গলদা চিংড়ি চাষ করে সফল হয়েছেন চাষি রাজু সরদার। 

ঝুঁকি আর সংশয়ের দেয়াল ভেঙে তাঁর এই সাফল্য দেখাচ্ছে– সঠিক ব্যবস্থাপনা আর নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে গ্রামবাংলার পুকুরই হতে পারে বড় আয়ের উৎস। 

রাজু দীর্ঘদিন ধরেই কার্প জাতীয় মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। তবে প্রচলিত চাষে লাভ সীমিত হওয়ায় নতুন কিছু করার চিন্তা করছিলেন। গত জুনে স্থানীয় এনজিও মৌসুমীর কৃষি ইউনিটের মৎস্য খাতের আওতায় ‘উত্তম ব্যবস্থাপনায় গলদা চিংড়ি চাষ’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর সুযোগ পান তিনি। 

প্রদর্শনীর আওতায় তাঁকে ৫০০ গলদা চিংড়ির জুভেনাইল (ছোট চিংড়ি) সরবরাহ করা হয়। অনেকের কাছে বিষয়টি তখনও ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও রাজু থেমে থাকেননি। নিজের উদ্যোগে আরও এক হাজার পিস জুভেনাইল সংগ্রহ করে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে সমন্বিতভাবে চাষ শুরু করেন তিনি।

রাজুর পুকুরে নিয়মিত পানির গুণগত মান পরীক্ষা, সুষম খাদ্য সরবরাহ, পুকুরের তলদেশ পরিষ্কার রাখাসহ সবকিছুই চলে পরিকল্পিতভাবে। তিনি বলেন, ‘গলদা চিংড়ি খুবই সংবেদনশীল। পানির মান ঠিক না থাকলে সমস্যা হয়। তাই নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখতে হয়।’ 

ফল মিলতেও বেশি সময় লাগেনি। কয়েক মাসের মধ্যেই চিংড়িগুলো দ্রুত বড় হতে থাকে। বর্তমানে প্রতি কেজিতে সাত থেকে আটটি গলদা চিংড়ি পাওয়া যাচ্ছে, যা স্বাদু পানিতে চাষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সন্তোষজনক ফলাফল। তাঁর পুকুরে মোট ১২০ থেকে ১৩০ কেজি গলদা চিংড়ি উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী তিনি। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গলদা চিংড়ির দাম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। সেই হিসাবে মোট বাজারমূল্য দাঁড়াতে পারে এক লাখ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। 

রাজু বলেন, ‘কার্প মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষ করায় একই পুকুর থেকে এখন দ্বিগুণ লাভের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ঝুঁকি ছিল, কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনায় তা সম্ভব হয়েছে।’ 

সরেজমিন কথা হয় স্থানীয় কয়েকজন চাষির সঙ্গে। তারা জানান, আগে স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ নিয়ে তাদের মধ্যে ভয় ও সংশয় ছিল। কেউ ভাবতেই পারেননি, নোনাপানির মাছ হিসেবে পরিচিত গলদা চিংড়ি এভাবে পুকুরে সফলভাবে চাষ করা সম্ভব। রাজুর সাফল্য সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে। আশপাশের এলাকা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাষিরা এসে ঘুরে দেখছেন পুকুরটি। ইতোমধ্যে জেলার ৩০ থেকে ৪০ চাষি পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। 

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলী বলেন, উত্তম ব্যবস্থাপনায় স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ করলে অল্প জায়গাতেও ভালো আয় করা সম্ভব। রাজু সরদারের এই সাফল্য অন্য চাষিদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আমরা চাই, এ ধরনের উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত হোক। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা বাড়ানো গেলে নওগাঁয় গলদা চিংড়ি চাষ একটি সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হতে পারে। 

রাজু সরদারের এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়। স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ ছড়িয়ে পড়লে কর্মসংস্থানের সঙ্গে বাড়বে মাছ উৎপাদনও। একটি পুকুর থেকেই নওগাঁর মৎস্য খাতে যুক্ত হচ্ছে নতুন অধ্যায়।