খাদ্য সংকট, প্রতিকূল পরিবেশ ও প্রকৃতির বিরূপ আচরণে বিলুপ্ত হতে চলেছে সামুদ্রিক পাখি খ্যাত পেঙ্গুইন। তবে এর পেছনে মানুষের তৈরি কারণকেই বেশি দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, এ পাখিটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে কঠোর আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই।
আকাশে ডানা মেলতে না পারা জলজ সামুদ্রিক পাখি হাম্বোল্ট পেঙ্গুইন। সাদা-কালোর সংযোজনের এ প্রাণিটি ভয়াল সমুদ্রে সাঁতার কাটতেও বেশ পটু। তবে জীববৈচিত্র্যে অবদান কিংবা পর্যটকদের মোহিত করলেও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পেঙ্গুইন।
পৃথিবীতে আজ অবধি যে পরিমাণ হাম্বোল্ট পেঙ্গুইন টিকে আছে তার ৮০ শতাংশের বাস চিলির প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে। বিজ্ঞানীদের ধারণা ১৯৯০ দশকের শেষদিকের তুলনায় পেঙ্গুইন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ৪৫ হাজার থেকে কমে এখন এই প্রাণিটির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজারেরও নিচে।
হাম্বোল্ট পেঙ্গুইন নিয়ে ঝুঁকির আভাস দিয়েছে চিলির বিজ্ঞানীরা। এরইমধ্যে তারা এই প্রজাতিটিকে বিপন্ন ঘোষণা করেছে। তাদের মতে, শিগগিরই হয়তো বড় ধরনের সংকটে পড়তে হতে পারে এ সামুদ্রিক পাখিটি।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও এই প্রজাতিটিকে নিয়ে ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে। এরই মধ্যে সমুদ্রে বসতি গড়া এ পাখিটির বাণিজ্যিকীকরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চিলি সরকার। গত মাসের শেষের দিকে দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় পেঙ্গুইনকে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আবার জীববিজ্ঞানীদেরও আশঙ্কা, এ পাখির সংখ্যা দিন দিনই কমছে।
বাণিজ্যিকভাবে মাছ ধরার কারণে প্রাণিটির খাদ্য সরবরাহ কমতির পাশাপাশি আবাসস্থলের ক্ষতি, প্রজনন স্থান ধ্বংস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়া, এ সমস্ত কারণেই ক্রমশ পেঙ্গুইনের সংখ্যা দিন দিন কমছে।
এমন নাজুক পরিস্থিতিতে অচিরেই পেঙ্গুইন বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, তাই দ্রুত পদক্ষেপের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
চিলির জাতীয় চিড়িয়াখানা সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী গিলারমো কিউবিলোস বলেন, ‘পেঙ্গুইন এখন হুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। প্রাণিটির বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়নি। যদি এর হুমকিগুলো অব্যাহত থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত এ প্রজাতিটি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
পশু চিকিৎসক পলিনা আর্স বলেন, ‘মাছ ধরার জালে অনেক পেঙ্গুইন মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি সামুদ্রিক সম্পদ লুটপাটের এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে। এসব কারণেই পেঙ্গুইন হুমকির মুখে পড়েছে।’
পেঙ্গুইন রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদে জেলেদের মাছ ধরার উপর কঠোর আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে সমুদ্রে সাঁতার কাটা এই পাখিটি।























