ঢাকা   রোববার
১৯ অক্টোবর ২০২৫
৩ কার্তিক ১৪৩২, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

সাত দাবি না মানলে খামার বন্ধের হুঁশিয়ারি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ০৮:১৩, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

সাত দাবি না মানলে খামার বন্ধের হুঁশিয়ারি

করপোরেট সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে মুরগির খাদ্য (ফিড) ও বাচ্চা, মেডিসিন বা ভ্যাকসিনের দাম সরকারের নির্ধারণ করাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে ১ নভেম্বর থেকে সারা দেশের প্রান্তিক খামারিরা পর্যায়ক্রমে খামার বন্ধ করবেন বলে সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘অযৌক্তিকভাবে ফিড, মুরগির বাচ্চা ও মেডিসিনের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার এসব কথা বলেন। এ সময় সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সুমন হাওলাদার বলেন, ‘সরকার আমাদের সাত দফা দাবি মেনে না নিলে আমরা প্রান্তিক খামারিরা খামার বন্ধ রাখতে বাধ্য হব এবং ডিম ও মুরগির উৎপাদন স্থগিত করা হবে। সরকার যত দিন আমাদের দাবি মেনে না নেবে, তত দিন আমাদের অবরোধ চলবে।’

সভাপতি আরো বলেন, ‘ডিম ও মুরগির ৮০ শতাংশ উৎপাদন করেন আমাদের প্রান্তিক খামারিরা। কিন্তু এই খাতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রান্তিক খামারিদের কোনো অংশগ্রহণ নেই।

গুটিকয়েক কম্পানির সিদ্ধান্তে আমাদের প্রান্তিক খামারিদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। এতে বিগত কয়েক বছরে হাজার হাজার প্রান্তিক খামারি ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।’

সুমন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশ ভারতে একটি ডিম বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকা এবং মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। কিন্তু আমাদের দেশে তা যথাক্রমে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা এবং ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকায়।


আমরা কেন অল্প দামে ডিম-মুরগি বিক্রি করতে পারছি না। এই স্বল্প দামে বিক্রি করতে না পারার পেছনে রয়েছে কয়েকটি কম্পানির স্বার্থসংশ্লিষ্টতা এবং সরকারের নজরদারির অভাব।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি কেজি ফিডের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফিডের দাম বেশি হওয়ায় একটি বিক্রয়যোগ্য পোলট্রি মুরগির উৎপাদন খরচ ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের প্রান্তিক খামারিদের লোকসান করে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে।

যখন ডিম বা মুরগির মূল্যবৃদ্ধি পায়, তখন সারা দেশে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপও দেখা যায়। কিন্তু ফিড বা মুরগির বাচ্চার দাম বাড়লে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না। যত দিন পর্যন্ত সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ডিম-মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত সাত দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার। দাবিগুলো হলো করপোরেট সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে ফিড, মুরগির বাচ্চা, মেডিসিন বা ভ্যাকসিনের দাম সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে। অবিলম্বে করপোরেট প্রভাবমুক্ত ন্যায্য ও স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ফিড, বাচ্চা ও ওষুধের বাজারে নিয়মিত অডিট ব্যবস্থা চালু করতে হবে। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ১০ শতাংশ লাভ যুক্ত করে ডিম ও মুরগির ন্যায্য দাম নির্ধারণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য প্রণোদনা, সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ ও ভর্তুকি দিতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ও করপোরেটপন্থী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।