
কুমিল্লার হোমনায় ময়ূরের খামার করে তাক লাগালেন হোমনা উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের বাবরকান্দি গ্রামের যুবক মো. শাহ আলী। শখ করে ২০১৯ সালে এক জোড়া ময়ূর কেনেন এই যুবক। ময়ূরের পেখম তুলে নাচ প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে তাকে। সেই মুগ্ধতা থেকে পরে খামার করার জন্য আরও পাঁচটি ময়ূর সংগ্রহ করেন তিনি।
বর্তমানে তার খামারে প্রায় ৩১ লাখ টাকা মূল্যের শতাধিক ময়ূর রয়েছে। বছরে বিক্রি করছেন প্রায় ২০ লাখ টাকার ময়ূর। ময়ূরের খামারের পাশাপাশি বাবার পুরোনো পেশা গরুর খামার রয়েছে শাহ আলীর। সেখানে রয়েছে ৮টি উন্নত জাতের গাভী- যা থেকে প্রতিদিন ৬০ লিটার দুধ পেয়ে থাকেন তিনি।
বাবরকান্দি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, ময়ূর খামারি বললে সবাই এক নামে চেনে শাহ আলীকে। খামারের ভেতর মনের আনন্দে উড়ছে ময়ূর।
স্থানীয় বাসিন্দা ডালিম মোল্লার ভাষ্য, শাহ আলী অনেক পরিশ্রমী যুবক। তার বাবার গরুর খামার ছিল, তারও রয়েছে গরুর খামার। পাশাপাশি ময়ূর পালন করে এলাকায় সারা ফেলেছেন। আমরাও ময়ূর দেখতে তার খামারে যাই। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসে ময়ূর দেখতে ও কিনতে। এটি আমাদের এলাকার জন্য গর্ব যে একজন তরুণ উদ্যোক্তা ময়ূর পালন করে সাফল্য অর্জন করেছেন।
উদ্যোক্তা মো. শাহ আলী বলেন, আমার বাবা আগে গরুর খামার করেছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর গরুর খামারের পাশাপাশি ময়ূর পালন শুরু করি। ৭টি ময়ূর থেকে ডিম বাচ্চা ফুটিয়ে আমার খামারে বর্তমানে ১০০টির বেশি ময়ূর রয়েছে। সৌখিন মানুষজন এগুলো কিনে পালন করেন। ময়ূরের বয়সভেদে প্রতি জোড়া ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। ময়ূরের পালক ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকি। ময়ূরের ডিম বিক্রি করি ১০ হাজার টাকা হালি।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত মোট ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ লাখ টাকার ময়ূর বিক্রি করেছি। আরও ৩০ লাখ টাকার ময়ূর খামারে রয়েছে। এটা শৌখিন জিনিস, অনেকে শখ করে কিনে নিয়ে যান। একজোড়া বড় ময়ূর বিক্রি করেছি সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আমি ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে ময়ূরের খামার করতে চাই।
যারা ময়ূরের খামার করতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে শাহ আলী বলেন, ময়ূর লালনপালন খুবই সহজ। এটা সৌখিন জিনিস। ময়ূরের খাবার মুরগির খাবার, প্রতিদিন একটা ময়ূরের পিছনে খাদ্যে ব্যয় ৬ টাকা, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম দিয়ে থাকি। সব মিলিয়ে ময়ূরের পিছনে খরচ হয় ৭-৮ টাকা। কেউ ভুল করে আগে খামারের পরিকল্পনা করবেন না। শুরুতে দুই-এক জোড়া পালন করে যদি মনে করেন পারবেন, তাহলে খামার করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। হঠাৎ চাইলেই ময়ূর যখন-তখন বিক্রি করা যায় না, তাই ময়ূরের খামার করে সাফল্য অর্জন করতে হলে পাশাপাশি অন্য একটা ইনকামের জায়গা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ময়ূর যখন-তখন বিক্রি করা যায় না। মানুষের পছন্দ হলে কিনবে। যারা বেকার রয়েছেন, বা চাকরি খোঁজেন তারা চাইলে শখের বসে ময়ূর পালন করতে পারেন। তবে বিষয়টি ভেবেচিন্তে করতে হবে। পালন করা সহজ হলেও যখন তখন বিক্রি করতে না পারার বিষয়টিও দেখতে হবে। ময়ূর পালনে যেকোনো পরামর্শ দিতে আমি প্রস্তুত।
হোমনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শফিকুল আলম সমকালকে বলেন, আমাদের উপজেলায় শাহ আলীরই রয়েছে একমাত্র ময়ূর খামার। নিয়মিত তার খামার পরিদর্শন ও সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। ময়ূরের পাশাপাশি তার গরুর খামারও রয়েছে। ময়ূর, গরুসহ সব প্রাণীর জন্য আমাদের সেবা অব্যাহত থাকবে।
বন বিভাগের চান্দিনা রেঞ্জ অফিসার ও হোমনা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম সমকালকে জানান, দেশীয় কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে লাইসেন্স হয় যেমন, কুমির, হরিণ, হাতি। ময়ূর যেহেতু বিদেশি প্রাণী সেক্ষেত্রে লাইসেন্স লাগবে না, তবে বন বিভাগকে অবগত করে খামার করতে হবে।
ময়ূর পালনের অনুমতির বিষয়ে খামারি শাহ আলী জানান, ঢাকা মহাখালী বন বিভাগের অফিস থেকে লাইসেন্স নিয়েছেন।