ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

কনটেন্ট বানাতে বনের হাতিকে পটকা ফাটিয়ে উত্তেজিত 

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ২৯ আগস্ট ২০২৫

কনটেন্ট বানাতে বনের হাতিকে পটকা ফাটিয়ে উত্তেজিত 

বনের ভেতর ছিল শান্ত হাতির পাল। এই নিরীহ প্রাণী নিয়ে কনটেন্ট বানাতে বনে ঢুকে পড়ে কয়েকজন তরুণ। ঢিল ছুড়ে, পটকা ফাটিয়ে উত্তেজিত করে হাতিগুলোকে। একপর্যায়ে লোকালয়ে চলে আসে হাতি। তা দেখতে ভিড় করে লোকজন। হাতি ক্ষেতের ফসল খায় ও পা দিয়ে নষ্ট করে। এসব ছবি তোলেন ও ভিডিও ধারণ করেন কেউ কেউ। এমন ঘটনা ঘটছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সীমান্তে।

গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সীমানা রাংটিয়া ও সন্ধ্যাকুড়ার হরের ভিটা গ্রামে হাতির পাল দেখা গেছে। এই দুই দিনে ক্ষুধার্ত হাতি রোপা আমন, বরবটি, শিম ও বেগুনের ক্ষেত তছনছ করে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আলম নামে এক কৃষক জানান, তাঁর ভাই আলামিন, প্রতিবেশী আখতারুল, আনিস, মিজান, রহিজ, প্রকাশসহ কয়েকজনের ক্ষেতের ধান ও সবজি খেয়েছে এবং পা দিয়ে নষ্ট করেছে বন্যহাতি।

অভিযোগ রয়েছে, বনের ভেতরে থাকা শান্ত হাতিকে পাথর ছুড়ে, পটকা ফাটিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে ফসলের মাঠে ডেকে আনে লোকজন। এ ছাড়া অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটররা হাতির ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে দেওয়ার জন্য লোকজনকে উৎসাহিত করছেন। তাদের উৎসাহে দূরদূরান্ত থেকে হাতি দেখতে আসা লোকজন পটকা ও পাথর ছুড়ে মারছে। এতে বনের ভেতর থাকা শান্ত হাতি উত্তেজিত হয়ে তেড়ে আসছে লোকজনের দিকে। পা দিয়ে নষ্ট করছে ফসলের মাঠ। সেই চিত্র ধারণ করছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা।

কনক মারাক নামে একজনের ভাষ্য, গত বুধবার সারাদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি। দেখেন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি। পাশের পাহাড়ে ছিল হাতি। দূরদূরান্ত থেকে দল বেঁধে শত শত লোক এসেছেন হাতি দেখতে। হাতির পালকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুপুরে হাতির কাছে যাবার পর দেখলাম উৎসুক জনতাকে বিনোদন দিতে কয়েকজন তরুণ হাতিকে ঢিল ছুড়ে মারছে, পাথর নিক্ষেপ করছে, পটকা ফোটাচ্ছে, বাঁশি বাজাচ্ছে। উৎসুক জনতার হইচই তো আছেই। হঠাৎ বনের ভেতর থেকে তেড়ে এলো এক হাতি। দৌড়ানি দিয়ে প্রায় ১৫০ গজ দূরে নিয়ে থামল। ভাগ্যিস কেউ হোঁচট খেয়ে পড়েনি। আমিও প্রাণ রক্ষার জন্য দিলাম দৌড়। এভাবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আটবার দৌড়ানি খেয়েছি। কেন হাতি মানুষ মারতে আসে, তা দেখলাম নিজ চোখে। যখনই পটকা ফাটায়, ঢিল মারে, হাতি তখনই ক্ষেপে যায় এবং তেড়ে আসে।’ হাতি তাড়ানোর সাহসী মানুষের চেয়ে উৎসুক জনতা বেশি। রাতেও সক্রিয় ছিলেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। কনক মারাক বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বললাম, ঢিল ছুড়তে মানা করেন। কেউ কারও কথা শোনে না। ফলে বনের ভেতর থেকে তেড়ে আসা ক্ষুব্ধ হাতির পাল ফসলের মাঠ পিষে দিল।’ ওই ব্যক্তি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘হাতির পালে চার দিন বয়সের একটি বাচ্চা হাতি দেখতে পেলাম। রয়েছে কয়েকটি গর্ভবতী হাতিও। এদের বাঁচান।’

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আখতারুল ও আনিস জানান, হাতি মানুষকে বিরক্ত করে না, বরং মানুষই হাতিকে বিরক্ত করছে। এতে মরছে মানুষ, মরছে হাতি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। মজা দেখছে কিছু লোক।

রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ‘চেষ্টা করছি হাতি ও মানুষ সামলাতে। হিমশিম খাচ্ছি।  মানুষ কোনো কথা শুনতে চায় না। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই মাইকিং করা হবে। যাতে মানুষ হাতিকে বিরক্ত না করে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বন বিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেলের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছে হাতিকে পাথর নিক্ষেপ করে, পটকা ফাটিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে ফসলের মাঠে ডেকে আনে লোকজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হবে। যাতে উৎসুক জনতা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটাররা হাতিকে উত্তেজিত না করেন। যারা বাড়াবাড়ি করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।