ঢাকা   মঙ্গলবার
১৪ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ইলিশ শিকারের মহোৎসব, প্রকাশ্যে বিক্রি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১১ অক্টোবর ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ইলিশ শিকারের মহোৎসব, প্রকাশ্যে বিক্রি

প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাজশাহীর চারঘাটে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব। জেলেরা ইচ্ছেমতো দিন-রাত মাছ ধরছেন। মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন মাঝেমধ্যে দু-একটি অভিযান চালালেও জেলেরা পালিয়ে ভারতীয় সীমান্তের ভেতরে গিয়ে মাছ শিকার করছেন। ভারতীয় জেলেরাও বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন। 

মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর দেশের অন্যতম ইলিশ প্রজনন অভয়াশ্রম পদ্মায় ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। এ সময় মা ইলিশ ডিম ছাড়তে নদীতে উঠে আসে। এই ২২ দিন পদ্মা নদীর জলসীমায় জাল ফেলা, ইলিশ মাছ শিকার, বহন, মজুত ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। গত ছয় দিনে তিনটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কোনো জাল, মাছ কিংবা জেলে আটক হয়নি বলছে মৎস্য অফিস। 

শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সরেজমিন পদ্মা নদীঘেঁষা চারঘাটের পিরোজপুর ও রাওথা এলাকায় দেখা যায়, রাতে মাছ শিকার করে একের পর এক নৌকা তীরে ভিড়ছে। ৩০টিরও বেশি নৌকা গিয়েছিল মাছ শিকার করতে। এর মধ্যে বাংলাদেশি জেলের পাশাপাশি ভারতীয় জেলের নৌকাও রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে মাছ কিনতে আসা সাধারণ মানুষ ও আড়তদারেরও দেখা গেছে।

মাছ কিনতে আসা সেলিম রেজা বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগে বাজারে মাছের দাম চড়া ছিল। সাধারণ মানুষ ইলিশ কিনতে পারেননি। এখন সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ভোরের দিকে নদীর পারে সস্তায় ইলিশ কেনার আশায় এসেছি। আড়তদাররা ভিড় করায় মাছের দাম বেশি চাচ্ছে। জাটকা ইলিশ চারশ টাকা কেজিতে কিনেছি।
স্থানীয় আড়তদার জিল্লুর রহমান বলেন, নদীতে রিটা, ঘাউরা, চিংড়ির পাশাপাশি ইলিশও ধরা পড়ছে। আমরা জেলেদের কাছ থেকে এসব মাছ কিনছি। মোবাইলে ও অনলাইনে অর্ডার করলে সেগুলো চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করছি। 

নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারিভাবে দেওয়া ২৫ কেজি চাল পাওয়ার পরও নদীতে মাছ ধরছিলেন সাগর আলী নামে এক জেলে। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রায় সব জেলেই জাল নিয়ে নদীতে নেমেছেন। অনেকেই নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ অবস্থায় আমি একা মাছ ধরা বন্ধ রাখলে ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে না। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন আগের মতো কঠোর না। তারা দিনে দু-একবার নদীতে এসে চক্কর দিয়ে চলে যায়। কাউকে কিছু বলে না। এ জন্য যে যার মতো মাছ ধরছেন, আমরাও ধরছি। ভারতীয় জেলেরাও আসছেন। 

দায়সারা অভিযানের অভিযোগ অস্বীকার করে চারঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন, অভিযানে গেলেই জেলেরা নৌকা নিয়ে ভারতীয় সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়েন। 

তখন আর তাদের আটক করা যাচ্ছে না। এতে জেলেরা ভারতের সীমান্ত রক্ষীর গুলির মুখেও পড়তে পারেন।  টাকার জন্য তারা মৃত্যুকেও তুচ্ছ ভাবছেন। বিষয়টি নিয়ে মৎস্য অফিস ও বিজিবির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। 

স্থানীয় জেলে সমিতির সভাপতি তাজমুল হক বলেন, ভারতীয় জেলেরা এসে হরহামেশা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আটক করা হচ্ছে না। এ জন্য আমাদের জেলেরাও উৎসাহিত হয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে ভারতের সীমান্তের ভেতরে ঢুকে মাছ ধরছেন। অনেকে বিএসএফের হাতে আটকও হয়েছেন। তারপরও জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করছেন। 

রাওথা এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, বিগত বছরগুলোতে কঠোর অভিযান হতো। এবার তেমনটা নেই। কঠোর অভিযান হলে জেলেরা নদীতে নামারই সাহস পেতেন না, ভারতের সীমান্তে পালিয়ে যাওয়া তো পরের ব্যাপার। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক থাকায় জেলেরাও সে সুযোগ নিচ্ছেন। নদীতে ইলিশ এখনও আসেনি এটা ভুল। পরিমাণে কম এসেছে, প্রতিনিয়ত তা বাড়ছে। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চারঘাট ইউসুফপুর ক্যাম্প কমান্ডার সাহেবুর রহমান বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় জেলেদের সচেতন করতে সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। মসজিদে নামাজের সময়ও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। 

মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নদীতে এখনও পর্যাপ্ত ইলিশ আসেনি। তাই অভিযান জোরদার করা হয়নি। শিগগিরই জোরাল অভিযান শুরু হবে। অভিযানের সময় অন্য দেশের সীমান্তে যাওয়ার বিষয়টি নৌ পুলিশও আমাকে জানিয়েছে। জেলে সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।