ঢাকা   মঙ্গলবার
২০ মে ২০২৫
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

বিলুপ্তির মুখে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমিরের প্রজাতির একটি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ২০ মে ২০২৫

বিলুপ্তির মুখে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমিরের প্রজাতির একটি

ওরিনোকো কুমির পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমিরের প্রজাতিগুলোর একটি। কিন্তু মানুষের অত্যাচারে আজ এর সংখ্যা ১০০টির নিচে নেমে এসেছে। ভেনিজুয়েলার ওরিনোকো নদী এবং আশেপাশের অঞ্চলেই এদের প্রাকৃতিক বাসস্থান। আগে এই কুমিররা নদীতে অবাধে ঘুরে বেড়ালেও, এখন মানুষের চোখ এড়িয়ে তাদের টিকে থাকার লড়াই করছে।

বেশ কয়েক দশক ধরে এই কুমিররা চামড়ার জন্য ব্যাপকভাবে শিকার হয়েছে। ফলে তাদের সংখ্যা ভয়াবহভাবে কমে গেছে। ভেনেজুয়েলায় চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মানুষ তাদের মাংস ও ডিম সংগ্রহ করছে খাওয়ার জন্য। যা তাদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তবে কিছু বিজ্ঞানীরা একে বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা করছেন। তারা খাঁচায় বন্দি অবস্থায় কুমিরের বাচ্চা লালন-পালন করে বড় করছেন। প্রতি বছর প্রায় ২০০টি কুমির এভাবে বড় করে আবার বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে সমস্যা হলো—এই কাজটা করছেন হাতে গোনা কয়েকজন। তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক, আর নতুন প্রজন্মের বিজ্ঞানীরা উন্নত জীবনের আশায় ভেনিজুয়েলা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

৩৪ বছর বয়সী জীববিজ্ঞানী আলভারাডো বলেন, এই কাজটা শুধু তার পেশা নয়, এটা তার দায়িত্ব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরও এই কাজে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন, যেন ভবিষ্যতে কেউ এই কাজটা চালিয়ে যেতে পারে। লেসলি প্যান্টিন চিড়িয়াখানার পরিচালক ফেদেরিকো প্যান্টিন বলেন, ‘আমরা শুধু বিলুপ্তি একটু দেরি করছি, থামাতে পারছি না।’ তার মতে, যতক্ষণ না বড় পরিসরে কাজ হবে, এই প্রাণীটিকে পুরোপুরি রক্ষা করা সম্ভব নয়।

তবে এই সীমিত উদ্যোগও একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। বিজ্ঞানীরা কুমিরের বাসা চিহ্নিত করে ডিম সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো চিড়িয়াখানা বা সংরক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করেন। বাচ্চারা যখন প্রায় ৬ কেজি ওজনের হয়, তখন তাদের বনে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এপ্রিল মাসে একদল কুমিরকে ছেড়ে দেওয়া হয় ভেনিজুয়েলা একটি নদীতে, যেখানে মানুষের বসতি কম এবং শিকার হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। বাচ্চা কুমিরগুলোকে কাঠের বাক্সে ভরে, তাদের চোয়াল বাঁধা অবস্থায় নদীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের পানি ছুঁইয়ে দেন, আর তারা ধীরে ধীরে সাঁতরে চলে যায় নদীর গভীরে।

৬৬ বছর বয়সী কুমির বিশেষজ্ঞ আলভারো ভেলাস্কো বলেন, ‘অনেকেই কুমিরকে ভয় পায় বা বলে কুৎসিত। কিন্তু আমি তাদের চোখে কিছু অসাধারণ দেখি। যখন তাদের ছেড়ে দিই, তারা কিছু সময় চেয়ে থাকে—যেন ভাবছে, এই বিশাল নদীতে এখন আমার কী করা উচিত? তারপর ধীরে ধীরে সাঁতরে চলে যায়।’

FUDECI-এর জীববিজ্ঞানী ওমর হার্নান্দেজ বলেন, ‘আমরা জানি, হয়তো আগামীকালই কেউ আবার এই কুমিরগুলো শিকার করবে। কিন্তু আমরা লড়াই থামাচ্ছি না। আমরা যতটুকু পারি করছি। নিখুঁত পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করলে কিছুই করা যেত না।’ তথ্যসূত্র: রয়টার্স

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে