ঢাকা   বুধবার
২১ মে ২০২৫
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

জলবায়ু-সহনশীল কৃষি প্রকল্পে ইফাদের ৭০ মিলিয়ন ডলার অনুদান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ২০ মে ২০২৫

জলবায়ু-সহনশীল কৃষি প্রকল্পে ইফাদের ৭০ মিলিয়ন ডলার অনুদান

ঢাকা, ২০ মে ২০২৫: ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ) বাংলাদেশের বন্যা ও খরাপ্রবণ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নতুন ৭০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো পরিবেশগত ধাক্কা মোকাবিলায় তাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।

জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্প (CRALEP) গত ১৪ মে রোমে ইফাদের ১৪৪তম নির্বাহী বোর্ড অধিবেশনে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন লাভ করে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে, যার তত্ত্বাবধানে থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ERD)।

হাওর এবং উচ্চ বরেন্দ্র অঞ্চলের ৩৩টি উপজেলায় ১.৩৪ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে CRALEP কাজ করবে, যা প্রায়শই বন্যা, আকস্মিক বন্যা এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামোর উন্নতি সাধন, আয়বর্ধক সুযোগ সম্প্রসারণ এবং জলবায়ু ঝুঁকি কার্যকরভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি।

প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৩৪ কিলোমিটার জলবায়ু-সহনশীল গ্রামীণ সড়ক এবং ৫৮টি গ্রামীণ বাজার নির্মাণে বিনিয়োগ করা হবে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে। ২৪০টি গ্রামে যাতায়াতের পথ (walkways), টিউবওয়েল এবং স্যানিটেশন সুবিধার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো স্থাপন করা হবে, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান এবং জনস্বাস্থ্য উন্নত করবে।

জলবায়ু-সম্পর্কিত ধাক্কা মোকাবিলায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার জন্য CRALEP ৭২টি উঁচু প্ল্যাটফর্ম বা ‘কিল্লা’ তৈরি করবে, যা বন্যার সময় গবাদিপশুকে আশ্রয় দেবে। ২৮০টি গ্রামে প্রকৃতি-ভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে পরিবেশগত ঝুঁকি কমাতে। এছাড়াও, প্রকল্পটি জলবায়ু-সহনশীল স্থানীয় অবকাঠামো কেন্দ্রের (CReLIC) মাধ্যমে আকস্মিক বন্যা ও খরার জন্য আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার করবে, যা সময়োপযোগী এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

CRALEP-এর মূল দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে রয়েছে যুবকদের ক্ষমতায়ন। এই প্রকল্পের আওতায় ৩৪,০০০ যুবককে বৃত্তিমূলক দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং আরও ১০,০০০ যুবককে উদ্যোক্তা সহায়তা প্রদান করা হবে, যা তাদের টেকসই জীবিকা গড়তে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সাহায্য করবে।

ইফাদের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ভ্যালেন্টাইন আছানচো বলেন, “এই প্রকল্পটি ইফাদ এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। CRALEP এই অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো এবং বহুমুখী জীবিকার মাধ্যমে, যা প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান এবং জলবায়ু তথ্য পরিষেবাগুলিকে একীভূত করবে। এটি দেশের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এবং সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের গ্রামীণ নারী, পুরুষ এবং যুবকদের উপর বিশেষ নজর দেবে। তাদের চাহিদা পূরণের জন্য সমন্বিত এবং টেকসই প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আরও সুরক্ষিত এবং মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখব।”

অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং ইফাদের গভর্নরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ইফাদের প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও বাংলাদেশের সাথে ইফাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের চমৎকার কর্মক্ষমতার প্রশংসা করেছেন।