
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে চলতি মৌসুমে কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন হলেও দামে হতাশ হয়ে পরেছেন মরিচ চাষীরা। মৌসুমের শুরুতে মরিচের জাত ভেদে প্রতি কেজি মরিচ ৫৫-৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১৬-২০ ও ৩৮-৪০ টাকা দরে। এতে হঠাৎ করে দাম অর্ধেকে নেমে আসায় হতাশ হয়ে পরেছেন উপজেলার শতশত মরিচ চাষীরা। বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে মরিচের আমদানি হওয়ায় এ উপজেলা থেকে দেশের প্রায় ১২/১৩ টি জেলায় মরিচ রপ্তানি হয় বলে জানান আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, জেলার পিঁয়াজ এবং মরিচের জন্য বিখ্যাত এই হরিরামপুর। এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নেই প্রচুর পরিমাণ পিঁয়াজ এবং মরিচের চাষ হয়। একই জমিতে একই সাথে পিঁয়াজ এবং মরিচের চাষ করেন কৃষকেরা। মরিচ গাছ বড় হতে না হতেই ২/৩ মাসের মধ্যে পিঁয়াজ উঠানো শেষ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় মরিচের পালা। এ উপজেলার পিঁয়াজ মরিচের আড়ত হিসেবে পরিচিত ঝিটকা বাজার। তবে ব্যবসায়ীদের অর্ন্তকোন্দলে ঝিটকার পিঁয়াজ মরিচের আড়ত দুই ভাগ হয়ে যায়। এতে বড় একটি অংশ আড়ত মেলায় একই উপজেলার ভাদিয়াখোলা বাজারে। বর্তমান ভাদিয়াখোলা আড়ত থেকে ৮০/৯০ টন এবং ঝিটকা বাজার আড়ত থেকে গড়ে ৭০/৮০ টন ও অন্যান্য হাটবাজারসহ প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই শ টনের অধিক মরিচ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয় বলে জানান আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার ভাদিয়াখোলা বাজারে কাঁচা মরিচের আড়তে গেলে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণ মরিচের আমদানি হয়েছে। ভ্যান, রিক্সা, ইজিবাইক ও নসিমনে করে দূরদূরান্ত থেকে কৃষকেরা এই বাজারে মরিচ নিয়ে আসছেন।
বাল্লা ইউনিয়নের সরফদীনগর এলাকার মো. নাসির উদ্দীন জানান, আমরা তিন বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। ফলন অনেক ভাল হয়েছে। প্রথম দিকে মরিচ একটু কম ধরলেও এখন অনেক মরিচ তোলা যায়। কিন্তু মরিচের দাম কম হওয়ায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। প্রথম দিকে বিন্দু ৪০/৫০ টাকা কেজি আর কারেন্ট ৭০/৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন বিন্দু মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮/২০ টাকা দরে আর কারেন্ট মরিচ ৩৮/৪০ টাকা দরে। এককেজি তুললেই খরচ হয় ১০টাকা। এরপর গাড়ি ভাড়া। সব মিলিয়ে দাম আর একটু না বাড়লে সব কৃষকই মরিচে ধরাশায়ী হবে।
খেরুপাড়া গ্রামের বিশ্বজিৎ শীল জানান, প্রথম দিকে মরিচের দাম বেশ ভালই ছিল। হঠাৎ করেই মরিচের কমে গেছে। এভাবে থাকলে কৃষকের লোকসান হবে। সর্বনিম্ন দাম ৪০/৪৫ টাকা হলে কৃষক মোটামুটি বাঁচবে। খরার কারণে সেচ দিয়ে মরিচ ক্ষেতে পানি দেয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেড়েছে। এক কেজি মরিচ তুলতেই ১০টাকা খরচ আছে। এরপর বাজারে নেয়ারও একটা খরচ আছে। তাতেও মরিচ বাজার পর্যন্ত আনতেই কেজি প্রতি ১২/১৩ টাকা খরচ হয়।
আড়ৎদার রজ্জব জানান, এখন দাম একটু কম। এতে আমাদের আসলে কিছু করার নাই৷ কারণ আমরা যে সব জেলাগুলোতে মরিচ পাঠাই সেখানে অনেক জেলা থেকেই মরিচ আমদানি হচ্ছে। ফলে মূল যে আড়তে আমরা মাল পাঠাই সেখানেই মূলত দাম কম। এতে কৃষকের যেমন লোকসান, তেমনি আমাদেরও ক্ষতি। তবে খুব তাড়াতাড়িই হয়তো বাজার আবার বাড়তে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি অর্থবছরে ১৮৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে, যা গত অর্থবছরে ১৮১৫ হেক্টর ছিল। কৃষিবিদ মরিচ ও কারেন মরিচের চাষ বেশি হয় এ অঞ্চলে। তবে দিন দিন মরিচের চাষ বেড়েই চলছে বলেও জানা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান জানান, এ উপজেলা বরাবরই কৃষি নির্ভর। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পিঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছরই মরিচের আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে খরা তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে কারও হাত নেই। তাই সেচের মধ্যেই যতটুকু সম্ভব গাছ সতেজ রাখছে কৃষকেরা। এতে খরচের পরিমাণ কৃষকদের একটু বেশিই লাগে। দেশের কাঁচা বাজার মালের চাহিদার ওপর মূল্য নির্ভর করে। ফলন ভাল হয়েছে, তাই মরিচের দাম একটু কম। তবে হয়তো সামনে দাম আরও একটু বাড়লে কৃষকের সুবিধা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সবসময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।