
লালপুর উপজেলায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গুদামেও সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে ধানের দাম কেজিতে তিন টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এর পরেও সংগ্রহের পরিমাণ বাড়েনি। নানা ধরনের ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় বলে গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষক।
চলতি মৌসুমের ২৪ এপ্রিল থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ৮১ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু করে খাদ্য বিভাগ। ধান সংগ্রহ হয়েছে ৪৮ টন। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬০ শতাংশ পূরণ হয়েছে। সংগ্রহ শেষ হয়েছে ৩০ জুন। চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯ টাকা কেজি দরে ৮৭১ টন। অর্জন হয়েছে ৬৩৫ টন।
গত মৌসুমে ৩৩ টাকা কেজি দরে ৬৭০ টন আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধান সংগ্রহ করতে না পারলেও চুক্তিবদ্ধ তিনটি মিলারের কাছ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে ৩২১.৯৯ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। একই মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে ১০৩৩ টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। এক কেজিও সংগ্রহ হয়নি। ৪৫ টাকা কেজি দরে ৬৮৪ টন চল সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। একই চিত্র দেখা গেছে ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে আমন ও বোরো ধান সংগ্রহ অভিযানে। ওই তিন বছরে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি গুদামে।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার বিষয়ে কথা হয় কৃষকদের সঙ্গে। তারা বলেন, খাদ্য গুদামে শুধু ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান কেনা হয়। গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতা ঠিক নেই এমন অজুহাতে ধান ফেরত দেওয়া হয়। মান নিয়েও কড়াকড়ি নিয়ম। সামান্য হেরফের হলেই ধান নেওয়া হয় না। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। এসব কারণে গুদামে ধান দিতে গিয়ে লোকসান হয়। অন্যদিকে ধানের মান কিছুটা খারাপ হলেও বাজারে বিক্রি করা যায়।
খাদ্য বিভাগ বলছে, তালিকাভুক্ত কৃষকদের থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়। বেশির ভাগ কৃষক আর্দ্রতা ও চিটামুক্ত ধান সরবরাহ করতে পারেননি। এ কারণে সংগ্রহের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এরপরও বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই ৪৮ টন বোরো ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
আবুল কালাম, মাসুদ রানাসহ কয়েকজন কৃষক জানান, গুদামে ধান সরবরাহের প্রধান বাধা কঠোর নিয়ম। বাজারে বিক্রি করলে এ সমস্যায় পড়তে হয় না। সংকট নিরসনে উৎপাদন খরচের সঙ্গে ৩০ শতাংশ সহায়তা দিয়ে দাম নির্ধারণ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয়কেন্দ্র খুলে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানান তারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ধানীগোল্ড, মিনিকেট, ২৮, ২৯ জাতের চিকন ধান কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা ও নেপালি স্বর্ণা বা মোটা ধান ৩১ টাকা কেজি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত উপজেলা খাদ্য গুদামে মজুত রয়েছে ৪৮ টন ধান। অর্জিত ৬৩৫ টন চালের মধ্যে গুদামে মজুত আছে ৫২২ টন।
উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকের আলী বলেন, এ বছর অনেক চেষ্টা করে ৪৮ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। গুদামে যে আর্দ্রতায় ধান সংগ্রহ করা হয় সেই ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষকেরা। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আফরোজা পারভীন বলেন, বেশির ভাগ কৃষক নিজের খাবারের জন্য ধান চাষ করেন। এরপর আবার গুদামে সরবরাহের ক্ষেত্রে ধানের আর্দ্রতা ঠিক থাকতে হয়। চিটাযুক্ত ধান নেওয়া হয় না। এই পদ্ধতিকে কৃষকেরা ঝামেলা মনে করেন। তাই বাজার থেকে গুদামে দাম বেশি হলেও তারা সরবরাহে আগ্রহী হননি। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, কৃষকদের লাভবান করতেই সরকারি গুদামে ন্যায্য দামে ধান সরবরাহ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এরপরও তাদের কোনো দাবি থাকলে লিখিতভাবে জানালে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।