ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২ আশ্বিন ১৪৩২, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ব্রি-৯৮ ধানে বিপ্লব, বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ব্রি-৯৮ ধানে বিপ্লব, বাম্পার ফলন

এ বছর আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দিনাজপুরের কৃষকেরা আউশ ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এতে খুশি তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, "আউশ ধান একসময় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমেই এর চাষ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।"

কৃষি বিভাগের গবেষণায় উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ব্রি-৯৮ আউশ ধান চাষে জেলায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মৌসুমের শুরুতে গত মে মাসে ১৩টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ব্রি-৯৮ জাতের বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়। তিনি জানান, আউশ ধানের এই সফল ফলন অর্জনে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন।

জেলা সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রেজাউল করিম জানান, তার গ্রামের কৃষকেরা সমবায় ভিত্তিতে ব্রি-৯৮ জাতের আউশ ধান চাষ করেছেন। সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পেরে কৃষকেরা খুব খুশি। প্রতি একর জমিতে ৭৫ থেকে ৮০ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিভাগের বিনামূল্যে সরবরাহ করা বীজ, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে অনাবাদি জমি অধিক উৎপাদনশীল হয়েছে। বর্তমান বাজারে কাঁচা ধান প্রতি মণ ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের খড় বিক্রি করেও বাড়তি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এতে ধান বিক্রি থেকে পাওয়া আয়ের পাশাপাশি খড় বিক্রি করে কৃষকেরা তাদের খরচের একটি অংশ তুলে নিতে পারছেন।

বীরগঞ্জ উপজেলার মহনপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. শরিফুল ইসলাম (৪২) বলেন, "চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জমিতে বীজতলা তৈরি করে ব্রি-৯৮ জাতের আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয়। কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত পরামর্শে সেচ, সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে খুব ভালো ফলন হয়েছে।" তিনি আরও জানান, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে মাঠজুড়ে আউশ ধানের সোনালি শোভা কৃষকদের মন ভরিয়ে তুলেছে। কৃষকেরা এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর একই জমিতে আগাম জাতের আলু চাষের প্রস্তুতি শুরু করবেন কৃষকেরা।

সদর উপজেলার কৃষক মো. আব্দুর রাজ্জাক (৪৭) বলেন, তিনি এ বছর ৭৫ শতক জমিতে আউশ ধান চাষ করে ৬৫ মণ ফলন পেয়েছেন। এই ধান বিক্রি করে তিনি আগাম জাতের আলুর চাষ করবেন। আদিবাসী কৃষক লুকাস মার্ডী বলেন, "গত বছর থেকে সমবায় ভিত্তিতে আউশ ধান চাষ শুরু করেছি। এবার উন্নত জাতের ব্রি-৯৮ আউশ ধানের আবাদ করে বেশ ভালো ফলন পেয়েছি। সমবায়ের মাধ্যমে চাষ করায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। আগামী বছর এই জাতের আউশ ধান আরও বেশি করে আবাদ করার আশা করছি।" মৃণাল কান্তি নামের আরেক কৃষক বলেন, তিনি দেড় একর জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছেন এবং এখন কাটা-মাড়াই চলছে। এই সময়ে কৃষকদের কিছুটা আর্থিক সংকট থাকে। ধান ঘরে তোলা তাদের জন্য আশীর্বাদ। ধান বিক্রি করে আলু চাষের খরচ পুষিয়ে যাবে।

সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, এই অঞ্চলের জমি উঁচু ও লালমাটি হওয়ায় আগে শুধু রবি শস্য চাষ করা হতো। আমন বা ইরি-বোরো ধান এখানে চাষ হতো না। এখন সরকারি উদ্যোগে কৃষকদের আউশ ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং একই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করে কৃষকদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তারা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় ৬৭০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্বল্প সময়ে ফলন পাওয়ায় কৃষকেরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, আগামীতে আরও বেশি কৃষককে আউশ ধান চাষে আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।