ঢাকা   রোববার
১৬ নভেম্বর ২০২৫
১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাঁওড় ও খালজুড়ে কচুরিপানা, মাছ শিকার ব্যাহত, ভোগান্তিতে স্থানীয়রা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

বাঁওড় ও খালজুড়ে কচুরিপানা, মাছ শিকার ব্যাহত, ভোগান্তিতে স্থানীয়রা

আলফাডাঙ্গা উপজেলার টিটা বাঁওড় ও বারাশিয়া খাল কচুরিপানায় ভরে গেছে। দিনদিন কচুরিপানা বৃদ্ধি পেয়ে এখন পানির দেখা পাওয়াই দুষ্কর। এতে নৌযান চলাচল ও মাছ শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা বাঁওড়ে ওই অঞ্চলের শতাধিক মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন কচুরিপানার কারণে বাঁওড়ে জাল ফেলার উপায় নেই। এতে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা চেষ্টা করেও কচুরিপানা সরাতে পারছেন না। একবার কিছুটা সরালেও কয়েকদিনের মধ্যেই তা ফের দখল হয়ে যাচ্ছে। 

টিটা গ্রামের লায়েক মিয়া জাল দিয়ে মাছ ধরেন। কিন্তু কচুরিপানার কারণে তিনি এক মাস ধরে মাছ ধরতে পারছেন না। তিনি জানান, প্রায় দুই লাখ টাকা ঋণ করে জাল কিনেছিলেন। বাঁওড়ে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। এখন কচুরিপানা এতটাই বেড়েছে যে, বাঁওড়ে জাল ফেলার মতো জায়গা নেই। তিনি বলেন, এত কচুরিপানা আমরা কী করে সরাব। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যেন কচুরিপানা অপসারণ করে দেয়। 

মৎস্যজীবী মনির হোসেন ও রমজান মিয়া জানান, তারা মাছ শিকার করে সংসার চালান। এখন দুই মাস হলো বাঁওড়ে কোনো মাছ ধরতে পারছেন না। তারা বলেন, পানিতে চলাচল না করতে পারলে মাছ বড় হবে না। কচুরিপানা অপসারণ না করা হলে মাছের উৎপাদনও ব্যাহত হবে। তারা জানান, মাছ ধরতে না পেরে তাদের মতো অনেকেই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

টিটা বাঁওড়ে রয়েছে নান্দনিক একটি ভাসমান সেতু। যেটাকে বলা হয় দেশের তৃতীয় ভাসমান সেতু। দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ সেতুটি দেখতে আসেন। তারা বাঁওড়ে নৌকায় ঘোরাঘুরি করেন। পানিতে গোসল করেন। পর্যটকদের কেন্দ্র করে স্থানীয় অনেক বাসিন্দা নৌকা বানিয়ে ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দেন। অনেকে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সব মিলিয়ে পর্যটন ও জীবিকার একটি মাধ্যম হয়ে উঠছিল ভাসমান সেতুটি। কিন্তু কচুরিপানার কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটকরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। অন্যদিকে মাঝিরা বেকার বসে থাকছেন। 

আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হাসান লেখাপড়ার পাশাপাশি নৌকা চালিয়ে বাড়তি টাকা আয় করেন। নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই বহন করেন। পরিবারকে কিছু আর্থিক সহযোগিতাও করেন। দুই মাস হলো কচুরিপানার জন্য নৌকা চালাতে পারছেন না তিনি। 

উপজেলা-সংলগ্ন বারাশিয়া খালও কচুরিপানার দখলে চলে গেছে। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন নদীর দুই পারের বাসিন্দারা। তারা দ্রুত কচুরিপানা অপসারণ চেয়েছেন। স্থানীয় একাধিক গৃহিণী জানান, তারা হাঁস পালন করেন। হাঁসগুলো পানিতে সাঁতার না কাটতে পারলে ঠিকমতো ডিম দেয় না। কচুরিপানার কারণে হাঁস পালনে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল জানান, বাঁওড় ও বারাশিয়া নদী কচুরিপানায় ভরে থাকার খবর তিনি পেয়েছেন। এলাকাবাসীর সুবিধার্থে তাদের সবাইকে নিয়ে কচুরিপানা অপসারণ করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ