
রাঙামাটির বরকলে পাহাড় থেকে পা পিছলে কাপ্তাই হ্রদে পড়ে মারা যায় বুনো হাতির একটি শাবক। গতকাল বুধবার পর্যন্ত সেটির মরদেহ উদ্ধার করতে পারেননি বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, শাবকটির মা পুরো হাতির দল নিয়ে সেখানে অবস্থান করায় মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি।
ঘটনাস্থল লিটনের টিলা পড়েছে বরুনাছড়ি গ্রামে। সেটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কাচালংমুখ বনশুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ির আওতাধীন। সোমবার রাতে পা পিছলে হ্রদে পড়ে শাবকটি মারা গেছে বলে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা। ওই ফাঁড়ির স্টেশন কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ভাষ্য, মৃত শাবকটি বিরল গোলাপি হাতির শাবক বলে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছি। বয়স আনুমানিক সাত-আট মাস। বুধবারও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও), প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ একটি দল নিয়ে মৃত শাবকটি উদ্ধারে যাই। কিন্তু হাতির মাসহ একটি দল সেখানে অবস্থান করায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়ানি।
ডিএফও মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি জানার পরই সেখানে গিয়েছি। দিনভর সেখানেই ছিলাম, হাতি শাবকটি উদ্ধারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। হাতি শাবকটির কাছে গেলেই মা হাতিটি তেড়ে আসে। মরদেহ উদ্ধারের পর ভেটেরিনারি সার্জন দিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে। এতে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
লেখক ও বন্যপ্রাণী গবেষক ইশতিয়াক হাসান বলেন, হাতির শরীরে মেলানিন নামের রঞ্জক উপাদানই ত্বক ও চোখে রং আনে। এই উপাদানের ঘাটতি হলে দুই ধরনের অবস্থা দেখা যায়। একটি হলো অ্যালবিনিজম, যেখানে রং একেবারে হারিয়ে শরীর ফিকে সাদা বা গোলাপি হয়ে যায়; আরেকটি লিউসিজম, যেখানে রঞ্জকের আংশিক অনুপস্থিতির কারণে গায়ে হালকা ফিকে বা গোলাপি আভা দেখা যায়। রাঙামাটির এই হাতিশাবকের এমন রং সম্ভবত লিউসিজমের ফলেই হয়েছে।
তিনি বলেন, বাচ্চা হাতিটির মৃত্যুর পর পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার দৃশ্য সত্যিই হৃদয় ভেঙে দেয়। হাতিদের ভালোবাসা, বন্ধন আর শোক প্রকাশ মানুষের মতোই গভীর। সন্তান হারালে তারা নীরবে কেঁদে ওঠে, মৃতদেহের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা– এমনকি কয়েক দিন কাটিয়ে দেয়। এই মা হাতিটিও যেন শোক কাটাতে পারছে না।