কুকুর ও বিড়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলা থেকে প্রতিদিন তিন শতাধিক মানুষ ভ্যাকসিন নিতে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আসেন। তবে হাসপাতালে কোনো ভ্যাকসিন নেই। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা দরিদ্র রোগীরা।
জীবন রক্ষায় বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভ্যাকসিন। অসাধু দোকানিরা বেশি দামে ভ্যাকসিন বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আবার অনেক সময় বেশি দামেও পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ। সংকট নিরসনে বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করছেন তারা। তাতেও মিলছে না ভ্যাকসিন।
টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, এটি পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ আছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছে। চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছে, শিগগির ভ্যাকসিন সংকট নিরসন হবে। তাঁর ভাষ্য, গত কয়েক মাস থেকেই জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনের চাহিদা বেশি। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে দিন দিন সরবরাহ কমে যাচ্ছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে না পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি ভ্যাকসিন চারজনকে ভাগাভাগি করে দিচ্ছিল।
দুই সপ্তাহ আগে কুকুরের কামড়ে আহত হয় সদর উপজেলার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিহা তূযা। পরে সাবিহার দরিদ্র বাবা আক্রান্ত অন্য চারজনের সঙ্গে ভাগ করে মেয়েকে এক ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছেন।
নাগরপুর থেকে আসা নাজমুল ইসলাম জানান, রাতে বাড়ির পোষা বিড়াল আঁচড় দেয়। পরের দিন সকালে নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। কিন্তু এখানে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেই। চিকিৎসকরা তাঁকে জানান, বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। বাধ্য হয়ে কয়েক দোকান ঘুরে ৫০০ টাকা দামের ভ্যাকসিন ৮০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁর।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ থেকেই হাসপাতালে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনের সংকট চলছে। গত আগস্টে চাহিদা ছিল চার হাজার ভায়াল, কিন্তু সরবরাহ ছিল ৪০০ ভায়াল। প্রাপ্ত ৪০০ ভায়ালের প্রতিটিকে চার ভাগ করে এক হাজার ৬০০ রোগীকে দেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তুলনামূলকভাবে রোগী বেড়ে যায়। এর পর ডিসেম্বরে রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ জনকে বাইরে থেকে কেনা ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাহিদার কথা জানিয়ে জরুরি চিঠি পাঠিয়েছে। তবে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, চাহিদার তুলনায় যা পাওয়া যাচ্ছে, তা একেবারেই অপ্রতুল। প্রতিটি উপজেলার জন্য চাহিদাপত্র দিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে উৎপাদন সংকট চলছে, সেখানে চাহিদা পূরণ তো সম্ভব নয়। তারপরও তাদের আশা, শিগগির ভ্যাকসিন সমস্যার সমাধান হবে।























