জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বগুড়ায় নদী-নালা, খাল-বিলে দেখা দিয়েছে চরম পানির সংকট। এতে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু ছোট মাছ। সংকট কাটাতে জলাশয়ে পানির প্রবাহ ফেরানোর তাগিদ পরিবেশবিদদের।
বগুড়ার ছোট নদীগুলোতে আর নৌকা চলে না। জল নেই, মাছ নেই্। প্রায় মৃত এ নদীগুলো বর্ষায় সামান্য প্রাণ ফিরলেও পরবর্তীতে জল সংকটে হারায় অস্তিত্ব । একই অবস্থা খাল-বিলগুলোরও। সময়ের আগেই তলানিতে ঠেকে জল।
মাছ ধরার দৃশ্য দেখার কথা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে। অথচ তিন মাস আগেই পানি শুকিয়েছে। পরিবেশের এ বিরূপ প্রভাবে খাল-বিলে কমছে মাছ। বিলুপ্ত হচ্ছে ছোট মাছের নানা প্রজাতি। বাতাসি, পেয়ালি, ভেদা- এমন ছোট মাছগুলো এখন আর ওঠে না শিকারির জালে। হাট-বাজারেও কমেছে সরবরাহ। দামও বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আগের মতো পানি হয় না, মাছও হয় না। আগে যেমন মাছ-পানি হতো, আগে পানি সবসময় থাকতো।’
অন্য একজন বলেন, ‘পানি চৈত্র মাসে শুকানোর কথা। সে পানি কার্তিক মাসেই শুকিয়ে গেছে। আর নদীতে আগে বড় বড় মাছ ছিল। এখন তো নেইই।’
নদীর জল-মাছের অভাবে জীবিকা সংকটে জেলে সম্প্রদায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিশেহারা জেলে জীবন। পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জীবিকা খুঁজছেন অনেকেই।
জেলেদের মধ্যে একজন বলেন, ‘বাঁশপাতালি, সড়েলি মাছ আগে প্রচুর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন নেই। আগে যে পরিমাণ মাছ মারছি এখন কিছুই পাই না। নদীই নাই মাছ পাবো কোথায় থেকে? নদীগুলো খুড়তে পারলে ভালো হতো। আমাদের জীবনযাপন খুব কষ্টে চলছে।’
ফসলে কীটনাশকসহ বিভিন্ন কারণে মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। স্বাদু পানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ছোট মাছ ১৪৩ প্রজাতির। এর মধ্যে ৬৪ প্রজাতির ছোট মাছ বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্ত প্রায় ১৯ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করেছে সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র। নদী-নালা, খাল-বিল থেকে মাছগুলো হারিয়ে গেলেও প্রজননের মাধ্যমে এখান থেকে আবারও পোনা সরবরাহ করা যাবে বলে জানান উপকেন্দ্রর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
বগুড়া সান্তাহারের প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডেবিট রিন্টু দাস বলেন, ‘আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে মাছে জিন সংরক্ষণ করা হয়েছে। যদি কোনো সময় দেখা যায় আমাদের ওই মাছটা একেবারে হায়ে গেছে তখন আমরা গবেষণা করে আর্টিফিশিয়াল ব্লিডিংয়ের মাধ্যমে সে মাছের পোনা আবার উৎপাদন করে আমরা প্রকৃতিতে ছেড়ে দেবো।’
প্রাকৃতিকভাবে মাছ সংরক্ষণ এবং ছোট মাছের চাহিদা পূরণে অবশ্যই নদী-নালা, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি দরকার। থাকতে হবে প্রজননযোগ্য পরিবেশও। মানুষের সৃষ্টি করা প্রতিবন্ধকতাকে জল সংকটের কারণ বলছেন পরিবেশবিদরা।
সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিবাগের সহকারী প্রভাষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উজানে কিছু বাধে দেয়া আছে। বহুল আলোচিত আমাদের ফারাক্কা বাধ আছে। তিস্তায় একটা টিপাইমুখ বাধের একটা প্রকল্পের কথা বলা আছে। এরকম অসংখ্য বাধ আছে আমাদের উজানের নদীগুলোতে। এ বাধগুলো থাকার কারণে, এর সঙ্গে কিছু কৃষি সেচ প্রকল্প আছে। এ সেচ প্রকল্প এবং বাধগুলোর কারণে আমাদের এখানে আসারমতো যে পানিগুলো সেগুলো আগেই প্রত্যাহার হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো আসছে না।’
উজানের দখল দূষণে ছোট নদীগুলো এখন মরা খাল। আর খাল-বিল পরিণত হয়েছে ফসলি জমিতে। মাছের প্রজননের সময় নদীতে আর পর্যাপ্ত জল থাকেনা তাই একের পর এক বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশিয় প্রজাতির মাছগুলো। সুস্বাদু এ মাছ সংরক্ষণে সচেতন হতে হবে সবার বাঁচাতে হবে আমাদের ছোট নদীগুলো।























