ঢাকা   বৃহস্পতিবার
১৫ মে ২০২৫
৩১ চৈত্র ১৪৩২, ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৬

গবেষণায় তথ্য

দেশে উৎপাদিত ১৩ শতাংশ শুঁটকিতে কীটনাশক, ৮৭ শতাংশই নিরাপদ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৫ মে ২০২৫

আপডেট: ০৯:৫০, ১৫ মে ২০২৫

দেশে উৎপাদিত ১৩ শতাংশ শুঁটকিতে কীটনাশক, ৮৭ শতাংশই নিরাপদ

দেশে উৎপাদিত শুঁটকিতে গড়ে ১৩ শতাংশ কীটনাশক ব্যবহারের চিত্র পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৮৭ শতাংশ শুঁটকিই নিরাপদ। যে ১৩ শতাংশ শুঁটকিতে কীটনাশক ব্যবহারের চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে রান্নার পর কীটনাশকের মাত্রা অনেক কমে যায় বলে জানিয়েছে গবেষক দল।

বুধবার (১৪ মে) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ সেমিনারে গবেষক দল কর্তৃক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।

দেশে শীর্ষস্থানীয় সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি উৎপাদন হয় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, দুবলার চর, স্বাদু পানির মাছের শুঁটকি উৎপাদন হয় নাটোরের চলনবিল ও সুনামগঞ্জে। এসব স্থানের উৎপাদিত শুঁটকি নিয়ে একটি গবেষণায় এ চিত্র উঠে আসে। তাতে দেখা গেছে, এসব শুঁটকিতে গড়ে ১৩ শতাংশ কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার মানুষ যেসব শুঁটকি গ্রহণ করে, তার মধ্যে সবথেকে বেশি খায় ছুরি শুঁটকি (চট্টগ্রাম ৫৭% ও কক্সবাজার ৫৫%), অন্যদিকে চলন বিলের মানুষ টাকি শুঁটকি বেশি গ্রহণ করে (৩৭%), আবার সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকার মানুষের সবচেয়ে পছন্দের শুঁটকি হলো লইট্ট্যা শুঁটকি (৪৬%)।

বিএফএসএর সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া, গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. আরিফুল ইসলাম, প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার ড. মো. নাজমুল বারী ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএফএসএর সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব। 

বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, ২০২২-২৩ সালের ৭টি গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়, তার মধ্যে এটি একটি।

তিনি বলেন, শুঁটকিতে কীটনাশক দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর ভেজালের সংজ্ঞা নির্ধারণের ব্যাপারে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছু সামাজিকভাবে অনিয়ম ও ভেজাল।

সেটি প্রকৃত অর্থে কোনো ভেজাল নেই। তাই কোনটা ভেজাল তা নির্ধারণ করতে হবে। শুঁটকিতে কীটনাশক ব্যবহারকে ভেজাল হিসেবে গণ্য করা হবে।’
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, ‘শুঁটকি মাছে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাসেল কনভেনশনে ১০টি কীটনাশক নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে দুটি কীটনাশক ব্যবহার হয়।’ 

ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রোটিনের ৬০ ভাগ আসে মাছ ও মাংস থেকে। দেশের বেশির ভাগ শুঁটকি উৎপাদনকারী অশিক্ষিত হওয়ায় সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারে না। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি তৈরি হয়। তখন রোদ না থাকলে কীটনাশকের ব্যবহার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘সূর্যের আলো ব্যবহার করে শুঁটকি তৈরিতে বেশির ভাগ কীটনাশক ব্যবহার হয়। গবেষণায় ২৬০টি সেম্পল নেওয়া হয়েছে, তাতে মাত্র ১৩ শতাংশের মধ্যে কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।’ কোন অঞ্চলের মানুষ দৈনিক কী পরিমাণ শুঁটকি খায় সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের মানুষ ১৫.৭২ গ্রাম, চট্টগ্রামে ১৪.৪৮, সুনামগঞ্জে ৭.৮৪, চলনবিলে ৯.৫৬ ও ডুবলার চরে ১২.২২ গ্রাম শুঁটকি গ্রহণ করে।’

শুঁটকিতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, দুবলার চর, সুনামগঞ্জ ও চলনবিলের শুঁটকিতে এনডোসালফান সালফেটের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। তা ছাড়া ডেলড্রিন, হেপটাচলোর ইপোক্সিসাইট ও বেটা এনডোসালফানের ব্যবহার কম পাওয়া গেছে।

ড. মো. নাজমুল বারি বলেন, সব জায়গায় পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে। তাই আগামী গবেষণাগুলোতে মাইক্রো প্লাস্টিকের বিষয়টি থাকতে হবে। সূর্যের আলো ব্যবহার না করে বরং মেকানিক্যাল ড্রায়িং করার আহ্বান জানান তিনি। শুঁটকি কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বা লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে ক্ষতিকর দিকটি কেটে যায় বলে জানান বক্তারা।

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে

 

সর্বশেষ