কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষ্ণপুর ও গিলাতলী- এই দুই গ্রামের মাঝের মাঠজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। কুয়াশা কেটেছে মাত্র, শীতের প্রকোপ এখনও থাকলেও কৃষক হারিছ মিয়ার জমিতে তা যেন উধাও। কোদালের কোপে কোপে মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে হলুদে ভরা চাকা- যেন হলুদ সোনার খনি। সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ কোদাল দিয়ে মাটির আইল ভেঙে হলুদ তুলছেন, কেউ মাটি ছাড়িয়ে স্তূপ করছেন। পরে বস্তায় ভরে নেওয়া হচ্ছে বাড়িতে। বাড়িতে নারীরা সেগুলো পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার করছেন। কৃষ্ণপুর গ্রামের হারিছ মিয়ার পাশাপাশি গিলাতলী গ্রামের মানিক মিয়া, আজহারুল ইসলাম ও আবু আহমেদের জমিতেও হয়েছে ভালো ফলন।
হারিছ মিয়া জানান, তিনি ১৪ শতক জমিতে হলুদ চাষ করে ২৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। ফলন পেয়েছেন ৭০ মণ। মণপ্রতি এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করে তিনি প্রায় ৭০ হাজার টাকা পাবেন। তার দেখাদেখি আশপাশের কৃষকরাও হলুদ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
আবু আহমেদ বলেন, তিনি ১৬ শতক জমিতে ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৮০ মণ হলুদ পেয়েছেন এবং ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা হলুদ চাষে ঝুঁকছেন। মানিক মিয়া ও আজহারুল ইসলামও জানান, আগামীতে আরও বেশি জমিতে হলুদ চাষ করবেন।
এলাকার যশপুর, কুন্দাঘোড়া ও নোয়াপাড়া এলাকাসহ লালমাই পাহাড় অঞ্চলগুলোতেও বাড়ছে হলুদের আবাদ। মাঠ ও পাহাড়- সবখানেই চলছে হলুদ চাষের উৎসব।
স্থানীয় কালির বাজার ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বলেন, ধানের তুলনায় তিন গুণ বেশি লাভ হওয়ায় ব্লকটিতে দিন দিন হলুদ চাষ বাড়ছে। গত বছর ৩ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হেক্টরে। রোগবালাই কম এবং সার ও সেচ কম লাগায় কৃষকরা এ ফসলে আগ্রহী হচ্ছেন।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির খান জানান, সাতটি ইউনিয়ন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় সমতল ও পাহাড় মিলিয়ে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরের উপজেলাতেও এই হলুদ সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষকদের প্রদর্শনী ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।























