 
						
									অসময়ে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জামালপুরের ইসলামপুর যমুনা পাড়ের আখচাষিরা। নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে আখক্ষেত, বসতভিটা আর ফসলি জমি। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সুগার মিলে আখ না নেওয়ায় চরম বিপাকে রয়েছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপাড়া এলাকায় গত কয়েক দিন থেকে যমুনার ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হঠাৎ নদীর পানি কমে যাওয়ার পর থেকেই দেখা দেয় ভাঙন। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একের পর এক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। প্রতিদিনই যমুনার বুকে বিলীন হচ্ছে নতুন নতুন ফসলি জমি।
স্থানীয় আখচাষি বাহাজ উদ্দিন আকন্দ জানান, তার দুই একর আখক্ষেত সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই এলাকার সাইফুল ইসলাম, কামরুল হক ও দুদু মিয়ার প্রায় পাঁচ একর জমিও নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে। তাদের ভাষ্য, এই কয়েক দিনে প্রায় ২০ একর আখক্ষেত ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
চাষি সোহানুর বলেন, বছরের পর বছর কষ্ট করে আখ চাষ করলেও এবার হঠাৎ ভাঙনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। মিল কর্তৃপক্ষ এ বছর এখনও আখ সংগ্রহ উদ্বোধন করেনি। বিক্রিও করতে দিচ্ছেনা! ফলে দ্বিগুণ ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের।
আখচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনে জমি গেছে, সুগার মিলেও নিচ্ছে না আখ। কোথায় যাবো, কার কাছে বলবো, বুঝে উঠতে পারছি না।
 
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, যমুনা নদী প্রতি বছর ভাঙন দেখা দেয়। এবার আমাদের জমি ও ফসল দুটোই যাচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রশাসন বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোমান হাসান বলেন, বর্তমানে ভাঙনের বিষয়টি আমি জেনেছি। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানাবো।
দেওয়ানগঞ্জ জিল বাংলা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তরিকুল আলম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির আখগুলো বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
বিলীন চার শতাধিক ঘরবাড়ি
এদিকে যমুনার তীব্র ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটছে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়ার চর গ্রামের বাসিন্দাদের। গত কয়েক দিন থেকেই অসময়ে যমুনা তিন কিলোমিটারজুড়ে তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে একটি মসজিদ, প্রায় শতাধিক একর জমি ও চার শতাধিক বসতঘরসহ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আকন্দ বলেন, অসময়ে নদীভাঙন আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে গেছে। এখনই যদি ভাঙন ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, ফসলি জমি ও বসতঘর নদী গ্রাস করে নেবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জানান, ভাঙনের বিষয়টি ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান বলেন, মন্নিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি চরে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নিতে সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সেই সমীক্ষার প্রতিবেদন আমরা খুব দ্রুত প্রেরণ করবো। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টেকসই কার্যক্রম বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
 
		









 
            	












