ঢাকা   মঙ্গলবার
১৪ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭

আলুর খেতে উচ্চ ফলনশীল পেঁপে চাষ করে বাজিমাত

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১২ অক্টোবর ২০২৫

আলুর খেতে উচ্চ ফলনশীল পেঁপে চাষ করে বাজিমাত

দিনাজপুরে আলুর খেতে উচ্চ ফলনশীল পেঁপে চাষ করে বাজিমাত। আলুর চেয়ে লাভ বেশী হওয়ার কারণে আলু খেতে এই পেঁপে চাষ শুরু করেছেন। সঠিক পরিকল্পনা, কৃষি অফিসের দিকনির্দেশনা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এ সফলতা পেয়েছেন। প্রত্যেকটি গাছে ৩০-৫০টি পেঁপে ধরেছে। তিন বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও আকর্ষণীয় বাবু ও সুখী জাতের হাইব্রিড পেঁপে চাষ করে চমক দেখিয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের পাল্টাপুর ইউপির বাছাড় গ্রামের কৃষক মুসা মিয়া। 

তার সফলতা দেখে গ্রামের বেকার যুবকসহ অনেকেই এখন ঝুঁকছেন পেঁপে চাষের দিকে। অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় বাবু ও সুখী জাতের পেঁপে চাষ করতে আগ্রহী এলাকার অনেক কৃষক। 

কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা পেলে পেঁপে চাষে বিপ্লব বয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন কৃষকরা। এখন সারি সারি পেঁপে গাছে অগণিত পেঁপে ঝুলছে। চারা লাগানোর ৩ থেকে ৪ মাসের মাথায় গাছে ফল আসা শুরু করে। ওজনে পেঁপেগুলো হয়ে থাকে এক থেকে দেড় কেজি। এই বাগান দেখে বোঝা যায়, গ্রামের মাটিতে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। এই বাগান শুধু ফলন নয়, তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।

ওই বাগান দেখতে আসা ফরহাদ হোসেনসহ কয়েকজন জানান, এত অল্প জায়গায় এত সুন্দর ফলন সম্ভব, ভাবতেই পারিনি। এখন আমিও এই বাবু ও সুখী জাতের পেঁপে চাষ করার কথা ভাবছি।

ওই গ্রামের কৃষক মুসা মিয়া বলেন, এই পেঁপের বাগান তৈরির সাথে আমার ভাতিজা আশরাফুল ইসলামসহ তার বন্ধু বিপ্লব বিনিয়োগ করেছে। ঢাকা থেকে উন্নত জাতের বাবু ও সুখী পেঁপের চারা এনে তিন বিঘা জমিতে ৩ হাজার গাছের চারা রোপণ করি। এতে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মাত্র ৫ মাসের মাথায় প্রায় ২ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। বর্তমানে গাছে প্রচুর ফল আছে। এক মাস পর পর বিক্রি করছি। তিনবার বিক্রি করেছি। প্রতিবারই বিভিন্ন খরচ ৫০ হাজার টাকা হলেও বিক্রি করি ১ লাখ টাকার উপরে। পাকা পেঁপে বিক্রি করলে আরও বেশী লাভ। এভাবে ২ বছরের অধিক ফলন পাবো এবং বিক্রি করবো।

তিনি আরও জানান, আগে আলু চাষ করতাম, কিন্তু খরচের তুলনায় লাভ ছিল কম। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শে পেঁপে চাষ শুরু করি। এখন দেখছি, পরিশ্রম করলে এই ফসল থেকে ভালো আয় করা সম্ভব। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও অনেক উন্নত হয়েছে। স্থানীয় বাজারে এই জাতের পেঁপের চাহিদা রয়েছে। বাবু ও সুখী জাতের পেঁপে গাছ ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই ফল দিতে শুরু করে এবং একটানা দুই বছর ফল দেয়।

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, প্রচুর পরিমাণে বাবু ও সুখীসহ সকল হাইব্রিড জাতের পেঁপের আবাদ বেড়েছে এ উপজেলায়। হাইব্রিড বাবু চাষ করে কৃষক অল্প সময়ে লাভবান হচ্ছেন। যার বাস্তব প্রমাণ কৃষক মুসা মিয়া। উনাকে দেখে এখন অনেক কৃষক পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পেঁপে চাষিদের সবরকম সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

কৃষি বিভাগ জানায়, উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড বাবু ও সুখী জাতের পেঁপে ফেব্রুয়ারি হইতে এপ্রিল মাস উত্তম সময় বপন করতে হয়। অধিক ফলনশীল, আকর্ষণীয়, সামান্য খাঁজযুক্ত এবং ওভাল/লম্বাটে জাত। প্রতিটি ফলের ওজন ১.৫-২.৫ কেজি। শাঁস আকর্ষণীয় হলুদ বর্ণের, অধিক পুরু (৩-৪ সেন্টিমিটার)। খেতে সুস্বাদু ও মিষ্ট। স্থানীয় আবহাওয়া বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ উপযোগী। দীর্ঘদিন ফলন পাওয়া যায়। কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়। এই জাতের পেঁপে পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না। ফলে দূর দুরান্তে সহজেই বাজারজাত করা যায়। ভাইরাস রোগ সহনশীল। জীবনকাল ২ বছরের অধিক।