
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীল সয়াবিন চাষ সম্প্রসারণে এইচএসবিসি বাংলাদেশ ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া একটি উদ্যোগ নিয়েছে। তারা যৌথভাবে ‘ইমপ্রুভিং প্রসপারিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি অব বাংলাদেশ ফিড অ্যান্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রি থ্রু সয়াবিন ফার্মিং’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এ প্রকল্প জমির ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা ও পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার ধরণন মোকাবিলা করতে কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি তাদের জীবিকা সুরক্ষা ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখছে।
এইচএসবিসি বাংলাদেশ জানায়, প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ৪০ হাজারেরও বেশি কৃষক প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল, স্বল্পমেয়াদি ও লবণাক্ততা সহনশীল সয়াবিনের জাত চাষ করছেন। জলবায়ু সহনশীল ফসল প্রাকৃতিক নাইট্রোজেন স্থিতির মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং কৃষকদের অধিক ফলন ও আয় নিশ্চিত করে, যা দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক।
সয়াবিন বাংলাদেশের ফিড ও ভোজ্যতেল শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল; যা আমদানি নির্ভরতা কমাচ্ছে এবং পোলট্রি, মৎস্য ও পশুপালন খাতে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রোটিন সরবরাহ নিশ্চিত করে। টেকসই ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সয়াবিন কৃষকরা এ বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারছেন।
প্রকল্পটি নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নোয়াখালীর স্থানীয় নারী নেতৃত্বাধীন ক্ষুদ্র ও মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সয়াবিন থেকে তৈরি টোফু ও নাগেট্স এখন ঢাকার বিভিন্ন সুপারমার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে ভোক্তা সরাসরি ক্ষুদ্র কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এটি উৎপাদন থেকে বাজারে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংযোগ তৈরির এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সুবর্ণচর উপজেলার কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি এর আগে কখনও এমন সয়াবিন বীজ দেখিনি। আগে যেই জাত চাষ করতাম তাতে ছোট দানা হতো আর ফলনও কম আসত, ফলে উৎপাদন খরচ ওঠানোই মুশকিল হয়ে পড়ত।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর প্রকল্পের সহায়তায় বিইউ সয়াবিন-৪ চাষ করেছি এবং এর ফলাফলে আমি দারুণ খুশি। অনেক ফলন হয়েছে এবং ভালো লাভ পেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক কৃষকেরই পুরোনো জাতের পরিবর্তে এই নতুন জাত গ্রহণ করা উচিত।’
সলিডারিডাডের তথ্য অনুসারে নোয়াখালী অঞ্চলের কৃষকরা নতুন উচ্চফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাত এবং ক্লাইমেট-স্মার্ট এগ্রিকালচার (সিএসএ) প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগের ওপর রিটার্ন (আরওআই) ১৬০ শতাংশের বেশি এবং প্রায় ৩৬% আয় বাড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
সলিডারিডাডের কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান বলেন, উর্বর জমি কৃষি উৎপাদনশীলতাকে বাড়িয়েছে ঠিকই, তারপরও তেলবীজের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রতি বছর আমদানিতে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। উচ্চফলনশীল ও স্ট্রেস টলারেন্ট সয়াবিন জাতের প্রবর্তন কৃষিকে বহুমুখীকরণ এবং আমদানি নির্ভরতা কমার এক প্রতিশ্রুতিশীল পথ দেখাচ্ছে। এই ‘অলৌকিক ফসল’ বহুমাত্রিক ও যাচাইযোগ্য প্রভাব রাখছে। এটি কেবল ক্ষুদ্র কৃষকের আয় বাড়াচ্ছে না, বরং পুষ্টি নিরাপত্তা এবং মাটির স্বাস্থ্যও উন্নয়ন করছে।
এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান বলেন, সলিডারিডাডের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এইচএসবিসি স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবনী সয়াভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করছে। এর মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষমতায়ন এবং স্থানীয় সাপ্লাই চেইনকে শক্তিশালী করছে। উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের মনোবল বাড়ানো থেকে শুরু করে সুপারমার্কেটের শেলফে সয়াবিনজাত পণ্য পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত কীভাবে টেকসই কৃষি সমৃদ্ধি আনতে পারে, সেটিই এই উদ্যোগটি দেখিয়ে দিচ্ছে।’
এইচএসবিসি বাংলাদেশ আরও জানায়, প্রকল্পটি কৃষকদের জলবায়ু সহনশীল চর্চা বাড়িয়ে স্থানীয় ভ্যালু চেইনকে শক্তিশালী করছে এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের ভোক্তা বাজার ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তৈরি করছে।