ঢাকা   শনিবার
১৮ অক্টোবর ২০২৫
২ কার্তিক ১৪৩২, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

তোষা পাট-৯-এর আরেক নাম ‘সবুজ সোনা’ উদ্ভাবিত 

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৪ আগস্ট ২০২৫

তোষা পাট-৯-এর আরেক নাম ‘সবুজ সোনা’ উদ্ভাবিত 

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত তোষা পাট-৯-এর আরেক নাম ‘সবুজ সোনা’। দুই মৌসুম গবেষণা শেষে ফরিদপুরে আঞ্চলিক কর্মশালায় এই জাতকে দেশের সেরা পাট বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট  বিভাগের কৃষিবিদ, গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। গতকাল রোববার দিনব্যাপী ফরিদপুর  শহরতলির ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে আঞ্চলিক কর্মশালায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

‘বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল পাট ও পাট জাতীয় ফসলের পরিচিতি, জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ওই আঞ্চলিক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ফরিদপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান। তিনি বলেন, এতদিন বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় জাতের পাটবীজ বপন করা হয়েছে, তার বেশির ভাগ ছিল দুর্বল। কোনোটি জলঅসহিষ্ণু, কোনোটি বেশি সময় ধরে চাষ করতে হয়, আবার কোনোটির উচ্চতা বেশি হলেও ভঙ্গুর এবং আঁশ পাতলা। নতুন জাত ‘সবুজ সোনা’ এ দুর্বলতাগুলো কাটাতে পেরেছে।

দুই বছর ধরে দেশের বিভিন্ন পরীক্ষামূলক প্লটে আবাদ করে দেখা গেছে, এর উচ্চতা অন্য জাতের চেয়ে বেশি। আবাদ করতে হয় ১০০ দিন, যা অন্য যে কোনো পাটের চেয়ে তিন থেকে চার সপ্তাহ কম। এটি জলসহিষ্ণু হওয়ায় ক্ষেতে পানি জমে থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলা ও মাগুরা পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে ‘সবুজ সোনা’র বীজ সফলভাবে চাষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে এই পাটের ভালো ফলন ও কম সময় উৎপাদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন মাগুরার কৃষক আক্কাস আলী এবং ফরিদপুরের সালথা পাট চাষি সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার মোল্লা। পাটবীজের বিদেশনির্ভরতা কমিয়ে ভালো জাত দেশেই উৎপাদনের ওপর তাগিদ দেন বক্তারা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনকে (বিএডিসি) বীজ উৎপাদনে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ খায়ের উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কারিগরি উইংয়ের পরিচালক প্রকৌশলী মোসলেম উদ্দিন।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ খায়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমরা বাস্তবে মাঠে দেখেছি ‘সবুজ সোনা’ অন্য তোষা পাটের চেয়ে মান ও ফলনে ভালো। এখন সংকট শুধু বীজের। যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সে পরিমাণ বীজের সংকুলান করা কষ্ট। তাই কৃষক যদি প্রান্তিক পর্যায়ে সবুজ সোনার বীজ উৎপাদনে এগিয়ে না আসে, তাহলে এই গবেষণা এবং ভালো জাতের সুফল পেতে দেরি হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কারিগরি উইংয়ের পরিচালক প্রকৌশলী মোসলেম উদ্দিন বলেন, পাট ও পাট জাতীয় ফসলের গবেষকরা একমত হয়েছেন, সবদিক দিয়ে পাটের এই জাতটি বর্তমানে সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট মানের।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রজনন বিভাগ) ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, ভারতীয় জাতের জেআরও ৫২৪-এর সঙ্গে পাট গবেষণা উদ্ভাবিত এক সেশনের হাইব্রিডাইজেশনের মাধ্যমে সবুজ সোনা উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষণা পর্যায়ে মান উত্তীর্ণের পর আমরা মাঠ পর্যায়ের সাফল্য পেয়েছি। তাই এটাকে আমরা সবার সেরা পাটের জাত হিসেবে ঘোষণা করছি।