
শেরপুর সদরের কামারেরচর ইউনিয়নের পয়স্তিরচর, গুচ্ছগ্রাম, ৬নং ও ৭ নং চর। প্রত্যন্ত এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে চলছে মরিচ শুকানোর উৎসব। কৃষকের বাড়ির চালা থেকে উঠান, সবখানেই এখন চলছে মরিচ শুকানোর কাজ। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলার সিংহভাগ মরিচ উৎপাদন হয়েছে এই চরাঞ্চলে।
সরেজমিনে, দূর থেকে নাকে গন্ধ ভেসে আসছিল শুকানো মরিচের। সারি সারি মরিচের প্লট বিছিয়ে তা পরিচর্যায় ব্যস্ত নারী-পুরুষ।
কৃষকরা জানান, কামারেরচর বুক চিড়ে বয়ে গেছে দশআনী ও পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র নদ। প্রতি বছর বন্যায় নদী এলাকার এসব কৃষিজমিতে প্রচুর পলি পড়ে।বন্যার পর পানি কমে গেলে পলি পড়া সেই উর্বর জমিতে চাষ হয় শত শত টন মরিচ।
কাঁচামরিচ বিক্রির পাশাপাশি একটা বড় অংশ খেতেই পাকানো হয়। এরপর সেই মরিচ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় রান্নার অতি জরুরি উপাদান শুকনো মরিচ। মূলত চাহিদার কারণেই স্থানীয় চাষীরা প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে শুকনো মরিচ চাষ করেন। যা নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হয় অন্য জেলাতেও।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, চলতি বছর শেরপুরে ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাম্পার ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ হাজার ১০১ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়। যেখানে ৬৫০ টন শুকনা মরিচ উৎপাদন হবে এবং হেক্টর প্রতি মরিচের গড় ফলন প্রায় ৩ টন।
পয়স্তিরচরের কৃষাণী তাসলিমা আক্তার জানান, বর্তমান বাজারে কাঁচামরিচের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। এই দামে মরিচ বিক্রি করলে আমাদের লোকসান হয়। তাই মরিচ ক্ষেতে পাঁকিয়ে পরে বিক্রি করি। ক্ষেতের পাকানো মরিচ বাড়ি নিয়ে পুনরায় ভালো করে রোদ দিতে হয়। রোদের তাপ বেশি থাকলে ১৫ দিন এবং কম থাকলে একমাস সময় লাগে শুকনো মরিচ বিক্রি উপযোগী হতে। তখন এই শুকনো মরিচ কেজি প্রতি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি করা যায়।
৬নং চরের কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘চরাঞ্চলের জমি মরিচ চাষে অত্যন্ত উপযোগী। মরিচ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেচ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে ৩০ হাজার টাকার মত লাভ থাকে।’
গুচ্ছগ্রামের কৃষক হাসমত আলী জানান, বর্তমান বাজারে কাঁচামরিচের দাম তুলনামূলক অনেক কম। তাই আমরা শুকনো মরিচ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছি। যেখানে কাঁচামরিচের দাম মনপ্রতি ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। সেখানে শুকনো মরিচের দাম মণ প্রতি ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।
কৃষক আজগর আলী বলেন, ‘উন্নত জাতের বীজ ও কৃষি অফিসের নিয়মিত পরামর্শ পেলে একদিকে যেমন মরিচের উৎপাদন বাড়বে অন্যদিকে কমবে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা। অন্যদিকে ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবে প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষক।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবীর জানান, শেরপুরে লাভজনক হওয়ায় দিন দিন শুকনো মরিচ উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। চরাঞ্চলের কৃষকদের মরিচ চাষ বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে নানা সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে