শীতের আগমনী বাতাস যখন ধীরে ধীরে গ্রামীণ বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন সিরাজগঞ্জের গাছিরা নিজেদের ব্যস্ততা শুরু করেছেন নতুন মৌসুমের জন্য। কাজিপুর, রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও শাহজাদপুরের গ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
গাছিরা জানাচ্ছেন, খেজুর রস সংগ্রহের জন্য প্রথমেই গাছের মাথা পরিষ্কার করতে হয়। সাদা অংশ কেটে রোদে শুকানো হয়। পরবর্তীতে আবার তা কেটে নলিতে ছোট-বড় বাসন বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়।
তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের রানীদিঘী গ্রামের হাছেন আলী বলেন, শীতের আগমনের জন্য এবার একটু আগেই গাছ প্রস্তুত করছি। একটি গাছকে ডাল পালা কেটে প্রস্তুত করতে কয়েক দিন সময় লাগে।
গাছিদের ব্যবহারিক দক্ষতা অবাক করে দেয়। সাধারণত মাটির হাড়ি ব্যবহার করা হয়, যার ধারণক্ষমতা থাকে ৬ থেকে ১০ লিটার। ভালো রাখার জন্য হাড়ির ভিতরে চুনের প্রলেপ দেয়া হয়, তবে কাঁচা রস খাওয়ার গাছের হাড়িতে চুন দেওয়া হয় না।
হাছেন আলী জানান, প্রথম ৩ দিন রস সংগ্রহের পর পরবর্তী ৩ দিন গাছ রোদে শুকানো হয়। বিকেল ৩টা থেকে হাড়ি বাঁধা শুরু হয়, আর ভোররাত ৫/৬টায় আমরা রস সংগ্রহ শুরু করি।
রায়গঞ্জের গাছি জাহিদুল জানান, এখন খেজুরের পরিমাণ কমে এসেছে। একজন গাছি ২০ থেকে ৩০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। বেশিরভাগই অন্যের গাছ। প্রতিটি গাছের জন্য মালিককে দিতে হয় ৭–৮ কেজি লালি গুড় বা এক হাজার টাকা।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শর্মিষ্ঠা সেন গুপ্ত জানান, উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ রয়েছে। খেজুর গাছের জন্য বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কৃষি বিভাগ কৃষকদের বাড়ির আশপাশ, জমির আইল, পুকুরপাড় এবং সড়কের ধারে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তোলা হলে কৃষকেরা গুড় উৎপাদন করে আরো বেশী লাভবান হবে বলে তিনি জানান।























