ঢাকা   বুধবার
২৩ এপ্রিল ২০২৫
৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

দখলদারদের কারণে খরস্রোতা ১২ নদ-নদী এখন কৃষিজমি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ২৩ মার্চ ২০২৫

দখলদারদের কারণে খরস্রোতা ১২ নদ-নদী এখন কৃষিজমি

ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ১২টি নদ-নদী। খননের অভাব আর দখলদারদের কারণে নদ-নদীগুলো বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। খরস্রোতা এসব নদ-নদীতে এখন আর আগের মতো পানি থাকে না। পাওয়া যায় না দেশি প্রজাতির মাছ।

শুষ্ক মৌসুমে সেখানে চাষ করা হয় ধান, পাট, সরিষাসহ নানা ফসলের। এদিকে এই সুযোগে নদীপারের জায়গা দখল করতে ব্যস্ত দখলদাররা। জেলার ছয় উপজেলায় নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। নদীগুলো দখলমুক্ত ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে জেলাবাসী বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেদিকে এখন পর্যন্ত কোনো নজর দেয়নি।

জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতী, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকি ও বুড়ী নদী। যার মোট আয়তন এক হাজার ৬৪১.৭৫ হেক্টর। ঝিনাইদহ শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদী। নদীর বিভিন্ন স্থানে জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

শহরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা গিয়ে পড়ছে নদীতে। সদর উপজেলার গান্না এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে একসময়ের খরস্রোতা নদী চিত্রা। নদীতে পানি না থাকায় সেখানে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। এসব কারণে একদিকে যেমন কমছে নদীর প্রশস্ততা, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে মাছসহ জলজ প্রাণী, পরিবেশ ও প্রতিবেশ। তাই দ্রুত সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সদর উপজেলার গান্না এলাকার মৎস্যজীবী নারায়ণ হালদার বলেন, ‘একসময় চিত্রা নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। এখন বর্ষাকালেও পানি থাকে না। তাই এখন ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি।’

ঝিনাইদহ শহরতলির মুরারিদহ এলাকার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন দেখেছি নবগঙ্গা নদীতে অনেক বড় বড় নৌকা আসত। এখন সেই নদীতে সারা বছর মানুষ হেঁটে পার হয়। বর্ষা মৌসুমেও পানির দেখা পাওয়া যায় না।’

জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জেলার সব নদ-নদী এখন দখলদারদের দখলে। এই দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য আমরা বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। শহরের নদীগুলোতে নিয়মিত আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আবার গ্রামাঞ্চলে নদীর বুকে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হচ্ছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেন কোনো নজরই দিচ্ছেন না। তাই সরকারকে এসব নদ-নদীর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিকাশ রঞ্জন দাস বলেন, ‘এ জেলায় যে নদ-নদীগুলো রয়েছে, তাঁর বেশির ভাগের উৎসমুখ ভরাট হয়ে গেছে। তাই উৎসবমুখগুলো খনন করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে নবগঙ্গা নদী খননরে জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি নদ-নদীগুলো খননের ব্যবস্থা করা হবে।’

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নদ-নদীগুলোর উৎসমুখ খনন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। খনন করা হলে এসব নদীর পানিপ্রবাহ আগের মতো হবে। এ ছাড়া যেসব স্থানে অবৈধ দখলদার রয়েছে সেখানে দ্রুতই অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।’

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।

 

সর্বশেষ