‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ-সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কৃষিবিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটিতে অনুমোদনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে এটি কার্যকর হবে।
নতুন নীতিমালায় স্বচ্ছ দরপত্র, ডিজিটাল নজরদারি, ডিলার নিয়োগে নতুন যোগ্যতা নির্ধারণ, এক পরিবারে একাধিক ডিলারশিপ নিষিদ্ধকরণ এবং সাব-ডিলার প্রথা বাতিলের মতো বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এই নীতিমালার মূল লক্ষ্য একচেটিয়া আধিপত্য ও সিন্ডিকেটভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ভাঙা। বছরের পর বছর পরিবহন ঠিকাদার ও ডিলারের প্রভাবশালী একটি চক্র অবৈধভাবে সার মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছিল। ফলে কৃষক বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হতো।
নতুন নীতিমালায় দীর্ঘদিন ধরে চলা ডিলারশিপের দ্বৈত কাঠামো বিসিআইসি ও বিএডিসি একীভূত করে এক ছাতার নিচে আনা হয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে সরকারি, আধাসরকারি বা বেসরকারি যে উৎস থেকেই সার আসুক, তা একক নীতিমালার আওতায় বিতরণ হবে। আগের মতো ‘বিসিআইসি ডিলার’ ও ‘বিএডিসি ডিলার’ নামে কোনো বিভাজন থাকবে না। ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া উভয় ধরনের সার বরাদ্দ একক ব্যবস্থাপনায় হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এর মাধ্যমে বহু বছরের ‘মনোপলি সিন্ডিকেট’ ভাঙার পথ তৈরি হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে সারের ডিলার ইউনিটের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রতিটি ডিলারের অধীনে তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে, যেখানে সরকারি ভর্তুকি, বিক্রয়মূল্যসহ তথ্য প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। বিক্রয়, উত্তোলন ও হিসাবরক্ষণ ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। ডিলার নিজ এলাকায় নির্ধারিত কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও সার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। সরকারি কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডিলার হতে পারবেন না। ডিলারশিপ জামানত দুই লাখ থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হয়েছে; নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার টাকা।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিলারদের কার্যক্রম মূল্যায়নের ভিত্তিতে নিয়মিত নবায়ন বা বাতিলের ব্যবস্থা থাকবে। অনিয়ন্ত্রিত সাব-ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। শহরে জমির পরিমাণ অনুযায়ী ডিলার সংখ্যা নির্ধারণ করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। যেসব ইউনিটে ডিলার নেই, সেসব স্থানে উপজেলা ও জেলা সার এবং বীজ মনিটরিং কমিটির সুপারিশে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রতিটি কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে ইউনিটভিত্তিক ডিলারের দায়িত্ব বণ্টন করবে। খালি ইউনিটের তালিকা জেলা পর্যায়ে প্রকাশ করে একই সঙ্গে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এ নীতিমালার আওতায় সব ডিলার সরকার নিবন্ধিত ও তালিকাভুক্ত হবেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদ্যমান সাব-ডিলার বা খুচরা বিক্রেতারা ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুরোনো নিয়মে সার কেনাবেচা করতে পারবেন। এরপর এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে।
কৃষি সচিব ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, আমরা পুরো ডিলার ব্যবস্থাকে কৃষকবান্ধব করেছি। এখন থেকে সরকার নির্ধারিত দামে কৃষক সার পাবেন; ডিলারকেই জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, এ নীতিমালার ফলে ডিলারদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম নীতিমালাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, ডিলার বাড়লে কৃষকের জন্য সারপ্রাপ্যতা বাড়বে। মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিলারশিপ থাকলে স্বচ্ছতাও বাড়বে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ডিলার বাড়লে প্রতিযোগিতা বাড়বে, মনোপলি কমবে। তবে ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করাই বড় চ্যালেঞ্জ।























