ঢাকা   শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫
১৫ কার্তিক ১৪৩২, ০৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

গণভোটের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:০৩, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

গণভোটের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা

গণভোট কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘গণভোট নিয়ে বিরোধ এখন তীব্র পর্যায়ে। এসব বিষয়ে আমাদের একসময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আর সেই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা কেবল তাঁকে সহায়তা করব।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘সিদ্ধান্ত কোনো ব্যক্তি এককভাবে নেবেন না। এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

প্রধান উপদেষ্টা প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন এবং একবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আমরা তাতে দৃঢ় থাকব।’
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘২৭০ দিন ধরে আলোচনা-পর্যালোচনা চলার পরও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে, তা হতাশাজনক। এই তীব্র বিরোধের পরিস্থিতিতে কিভাবে সমঝোতার কোনো দলিল পাস করা যায়, সেটি এখন আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি।

আগে আমরা ভেবেছিলাম, বিরোধ কেবল বিষয়বস্তু নিয়েই, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিরোধ দুই জায়গায়—একটি হলো, প্রস্তাবটি কোন পদ্ধতিতে পাস করা হবে, আর অন্যটি হলো গণভোট কবে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো এখন এমন দৃঢ়, পরস্পরবিরোধী ও উত্তেজিত ভূমিকা নিয়ে নিয়েছে যে সরকার কিভাবে এগোবে তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। এত দিন আলোচনার পরও যদি আপনাদের মধ্যে ঐকমত্য না আসে, তাহলে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের ক্যাবিনেট বৈঠকে রাজনৈতিক অনৈক্য নিয়ে একটি সাধারণ আলোচনা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন আমাদের সামনে দুটি বিকল্প প্রস্তাব রেখেছে।

প্রথমটি হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করা; আর যদি ২৭০ দিনের মধ্যে তা সম্ভব না হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে। এটি আগে কখনো ঘটেছে কি না কিংবা আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কি না—তা আমরা  দেখব। দ্বিতীয় বিকল্প হলো, পুরো দায়দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু এই দুই প্রস্তাবের কোনোটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো গভীর ও তীব্র মতবিরোধ বিরাজ করছে।’
জুলাই সনদ নিয়ে অনৈক্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘যে যেটা বলুক, আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে জাতীয় নির্বাচন করব। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

গণভোট কবে হবে—নভেম্বরে, নাকি নির্বাচনের দিন, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, দুটি বিষয় নিয়েই প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

কমিশনের সুপারিশ নিয়ে তিনি বলেন, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘কাজ অনেক সহজ হতো, যদি রাজনৈতিক দলগুলো আগের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকত। যেভাবে তারা ফ্যাসিস্টদের দেশ থেকে হটিয়েছিল। তখন তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, সবাই সেটার দিকেই মনোযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি জটিল। মানুষের উদ্বেগ, আলোচনা, নানা মতবিরোধ। সব মিলিয়ে আমাদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েই এগোতে হচ্ছে।’

গুম কমিশন হবে না, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আলাদা করে গুম কমিশন গঠন করা হবে না; মানবাধিকার কমিশনই সেই দায়িত্ব পালন করবে—এ বিধান নতুন আইনে রাখা হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, আগের মানবাধিকার কমিশন ছিল দুর্বল ও কার্যত ক্ষমতাহীন। নিয়োগপ্রক্রিয়া ও এখতিয়ারে নানা ত্রুটি ছিল। নতুন অধ্যাদেশে কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে এটি প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার সংরক্ষণমূলক যেকোনো আইনের মূল দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনকে প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, নতুন কমিশনে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য থাকবেন। নিয়োগের জন্য আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বাছাই কমিটি থাকবে, যারা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নিয়োগের সুপারিশ করবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, রায়েরবাজার কবরস্থানে জুলাই আন্দোলনের সময় নিহত বহু বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে। এসব লাশের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার কাজ চলমান। তিনি বলেন, ‘ওখানে আমরা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ডিএনএ ল্যাবের কাজ করাব। তাঁরা সরাসরি এসে কাজ করবেন। শিগগিরই এ বিষয়ে আরো অগ্রগতি দেখতে পাবেন।’

প্রেস সচিব জানান, রায়েরবাজারে ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছে, তাদের পরিচয় নির্ধারণ এখন একটি বড় বিষয়।