
গরু বা ছাগলের মাংসের চেয়ে ভেড়ার মাংসের পুষ্টিগুণ অনেক বেশী। গবেষণায় এমন তথ্যগুলোর প্রমাণ পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। ‘ভেড়ার মাংস জনপ্রিয়করণ’ শীর্ষক ওই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন বাকৃবির পশুপালন অনুষদের পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ এহসানুর রহমান।
জানা গেছে, বিশ্বে ভেড়ার মাংস অনেক বেশি জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের মানুষের ভেড়ার মাংস খাওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। গবেষকদল সে সব বিষয়গুলোর বৈজ্ঞানিকভাবে সত্যতা বের করার চেষ্টা করেন। ‘পপুলাররাইজিং শিপ মিট (মাটন) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় তারা দেখেন গরু, ছাগলের মাংসের চেয়ে ভেড়ার মাংস অনেক বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা এটি নিশ্চিত হন। সেখানে তারা ভেড়ার মাংসে আমিষ ও ক্যালরির পরিমাণ বেশি পান ও ক্ষতিকারক চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমান কম পান।
গবেষকরা জানান, ভেড়ার মাংসে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, কপার, ফসফরাস ও ওমেগা অ্যাসিড থাকায় ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, টিস্যু গঠন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও গরু বা ছাগলের মাংস খেতে অভ্যন্ত এরকম বিভিন্ন শ্রেণ- পেশার মানুষের উপর ভেড়ার মাংস খাওয়ানোর মাধ্যমে প্যানেল টেস্ট করেন তারা। সেখানেও তারা দেখেন ভেড়ার মাংসকেই অধিক পছন্দ করেছেন। বাংলাদেশের গবেষকদের করা এই গবেষণাটি জার্নালেও প্রকাশ হয়েছে।
গবেষণার প্রধান গবেষক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ এহসানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে ভেড়ার মাংস খাওয়া নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, যদিও সেগুলোর কোনটিও সত্যি নয়। মানুষেরা মনে করেন ভেড়ার মাংসে গন্ধ রয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন ভেড়ার মাংস কম পুষ্টিগুণসম্পন্ন, মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি প্রভৃতি অসত্য বিষয়। এসব অপপ্রচারের কারণেই মানুষ ভেড়ার মাংস খাওয়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, বাজারে ভেড়ার মাংসকে ছাগলের মাংস বলে চালিয়ে বিক্রি করে, কিন্তু ক্রেতা এটি বুঝতেই পারে না। আমরা চাই ভেড়ার মাংস, ভেড়ার মাংস বলেই বিক্রি হউক।
এছাড়াও ভেড়ার কোন জাতগুলো দেশের খামারীরা লালন পালন করলে লাভবান হতে পারে, সে বিষয়ের উপরও আমরা এই গবেষণাটি করি। ভেড়ার মাংসকে সকলের কাছে জনপ্রিয় করতে যত ধরনের উদ্যেগ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো আমরা করার চেষ্টা করছি। ভেড়ার মাংসের উপর প্যানেল টেস্ট করেছি। সেখানে প্রত্যেকেই ভেড়ার মাংসকে বেশি সুস্বাদু বলেছেন। এমনকি ভেড়ার মৃত্যুহার কম। গরু বা ছাগলের চেয়ে অনেক কম পুুজিঁতে দ্রুত অধিক মুনাফা পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ভেড়ার পশমকেও কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা যায়।’